কলকাতা: নয়াদিল্লি: চোখ রাঙাচ্ছে করোনা৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকার৷ ইতিমধ্যেই করোনা প্রভাবিত এলাকা চিহ্নিত করে লকডাউন বিধি কড়াকড়ি করা হয়েছে৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলছে পুলিং টেস্টিং ও ব়্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট৷ কিন্তু, তার মাঝেই রাজ্যের ৭ জেলায় লকডাউন বিধি ঠিকঠাক পালন না হওয়ার অভিযোগ তুলে বাংলায় আসছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল৷ কেন্দ্রের এই ঘোষণার পর রাজ্যের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুললেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নবান্ন থেকে কেন্দ্রের ওই দলের বিরুদ্ধে সরাসরি বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা৷ মুখ্যসচিবের সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতে না হতেই কেন্দ্রের দল নবান্নে হাজির হয়ে যায়৷
আজ বিকালে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘কেন্দ্রের টিম কেন গিয়েছে, কী জন্য গিয়েছে, কোন এলাকা বেছে নিয়েছে, জানি না৷ আমরা এটা নিয়ে ফোন পেয়েছি, চিঠি পেয়েছি৷ খবরটি জানার ১৫ মিনিটের মধ্যে এই দলটি কলকাতা ও বাগডোগরায় নেমে গিয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, বিশেষ ওই দল রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে৷ আমাদের বক্তব্য একটাই, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কীভাবে কাজ করবে সেটার নির্দিষ্ট সেটআপ দেওয়া আছে৷ স্বাস্থ্য রাজ্যের বিষয়৷ মহামারী কেন্দ্রের বিষয়৷ কিন্তু তাতে কোনও অবকাশ নেই, কেন্দ্র সরকার যদি কোনও কাজ করার দরকার আছে, এমন কোনও নির্দেশ দেয়, তাহলে আমরা করব না কেন? কিন্তু আজ হঠাৎ করে টিম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ দলটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে কোথাও কোথাও চলে গিয়েছে৷ কোথাও বিএসএফকে নিয়ে মাঠে চলে গিয়েছে৷ কেন্দ্র যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তাতে আমাদের মনে হয়, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের সঙ্গে কথা বলে, যদি প্রয়োজন হতো তাহলে তারা মাঠে নামতে পারত৷ কিন্তু এমন মনে হচ্ছে, আমরা যেন কিছু লুকাচ্ছি৷ তারা যেন এসে সরাসরি রাস্তায় নেমে পড়েছেন৷ আমরা এটা মেনে নিতে পারছি না৷’’
এরপর তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, আসুন আমাদের সঙ্গে কথা বলুন৷ রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন মুখ্যসচিব৷ আমার সঙ্গে কথা বলুন৷ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব৷ তারপর যদি আপনার মনে হয়, আপনারা ফিল্ডে যাবেন৷ আপনার যেতে পারেন৷ কিন্তু, কেন আমাদের না জানিয়ে চলে গেলেন? আমাদের অবস্থান পুরো স্বচ্ছ৷ মুখ্যমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন৷’’ মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘কলকাতায় যে দলটি এসেছে, সেটা আমার সঙ্গে কথা বলেছে৷ আমাকে বলা হয়েছে, এই ধরনের টিম যাচ্ছে৷ এই কথাটা জানানোর পর ১৫ মিনিটের মধ্যে দলটি কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছে৷ তার মানে দিল্লি থেকে দল বেরিয়ে গিয়েছে৷ আমাদের শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য বলা হয়েছে৷ এখানে টিম পাঠানো হল৷ আমরা মনে করি, এটা রাজ্য সরকারের যোগাযোগ করে যদি যেত তাহলে আপত্তি ছিল না৷ এর মধ্যে বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন৷ এর মধ্যে যদি কেউ পরামর্শ দিতে পারেন পারতেন, এছাড়াও তারা যদি আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলতেন, তাহলে আমরা বিষয়টি মেনে নিতাম৷ কিন্তু বিমান থেকে নেমে সরাসরি মাঠে চলে যাওয়া, এটা কখনও মেনে নিতে পারছি না৷’’
বলেন, ‘‘যে দলটি এসেছে, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব৷ কিন্তু আমরা যতক্ষণ না পরিষ্কার না হচ্ছি, কেন তাঁরা এসেছেন, ততক্ষণ আমরা রাজ্যে ওদেরকে ঘুরতে দেব না৷ কারণ যখন সংবাদটা প্রথম আসে, তার ১৫ মিনিটের মধ্যে দলটি মাঠে নেমে যায়৷ আমি ওদের সঙ্গে কথা বলব৷ কিন্তু কোথায় কথা বলব৷ সেটা আমি এখনও বলতে পারছি না৷ কিন্তু আজ ওদের সঙ্গে কথা হবে৷’’ বলেন, ‘‘ওদের সমস্ত থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আমাদের দেখতে বলা হয়েছিল৷ ওদের পরিবহনের ব্যবস্থা আমাদের করতে বলা হয়েছিল৷ কিন্তু আমাদের কিছু না জানিয়ে নিজেদের মত ঘুরতে শুরু করে দেয়৷ এখন মনে হচ্ছে বিএসএফ এসএসবি একটা প্রতিপক্ষ দল, তাদেরকে নিয়ে ওরা ঘুরছে৷ ওদের আমাদের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল৷ ওরা কেন্দ্রের নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেছেন৷’’ মুখ্যসচিবের সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতে না হতেই কেন্দ্রের দল নবান্নে হাজির হন৷ সূত্রের খবর, নবান্নে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজীব সিনহা৷