Aajbikel

নিশীথ-কাণ্ডে কড়া বিবৃতি রাজভবনের, বিজেপির দাবি মেনে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে রাজ্যে?

 | 
রাজভবন

নিজস্ব প্রতিনিধি: নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলার ঘটনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের সুর এবার মিলে গেল। তাঁরা প্রত্যেকেই ঘটনার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন। অবিলম্বে রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করে রাষ্ট্রপতি জারি করা হোক, বা আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে জারি করা হোক ৩৫৫ ধারা, এই দাবিতেই সরব হয়েছেন তাঁরা। ঠিক সেই সময় ঘটনাটি নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছে রাজভবন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কী সত্যিই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে বড় কোনও পদক্ষেপ করতে পারে কেন্দ্র? এভাবেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ের উপর হামলার ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের। উল্লেখ্য কোচবিহারের দিনহাটায় নিশীথের উপর হামলার ঘটনাকে ‘শোচনীয়’ আখ্যা দিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কার্যত প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছেন তিনি।  আনন্দ বোস জানিয়েছেন তিনি নিশীথের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সংস্কৃতির মাটি বলে পরিচিত বাংলায় এই হামলা উদ্বেগজনক ঘটনা বলেই তিনি মনে করছেন। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের। আনন্দ বোস তাঁর বার্তায় জানিয়েছেন, ‘‘যাঁদের হাতে দায়িত্ব রয়েছে তাঁদের সংবিধানের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। বাংলা চায়, প্রত্যেক পুলিশ বা প্রশাসনিক কর্তা, তাঁরা যে দায়িত্বেই থাকুন না কেন, তাঁরা কোনও রকম ভয় না পেয়ে এবং পক্ষপাতিত্ব না করে যেন তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন।" এরপরই তৃণমূলকে রীতিমতো কাঁপুনি  ধরিয়ে দিয়ে রাজভবনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে রাজ্যপাল চুপ করে বসে থাকবেন না।

শনিবার দিনহাটার বুড়িরহাট অঞ্চলে জনসংযোগ কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। অভিযোগ তাঁর কনভয়ের উপর হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এমনকী বোমা, গুলি ছোঁড়া হয় বলেও অভিযোগ করেছেন নিশীথ। নিশীথের অভিযোগ তাঁকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হয়েছিল। তবে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন  দিনহাটার বিধায়ক তথা রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ।

এদিকে শনিবার ঘটনার পরেই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে রাজ্যপাল যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে পদক্ষেপ করেন সেই আবেদন জানান বিরোধী দলনেতা। এর পাশাপাশি রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে একই দাবি নিয়ে ই-মেল মারফত চিঠিও দিয়েছেন শুভেন্দু। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষরাও রাজ্যে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের কথা  বলেছেন। এই পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যায় রাজভবন যেভাবে ঘটনাটি নিয়ে বিবৃতি জারি করল তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সিভি আনন্দ বোস তৃণমূলের 'গুড বুকে' থাকতে শুরু করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে দেখা যায় তাঁকে।

স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যপালের সেই ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তখন রাজভবনকে বিবৃতি দিতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে রাজভবন যে কড়া পদক্ষেপ করবে সেই বার্তাই তখন দেওয়া হয়েছিল। এবার নিশীথ প্রামাণিকের উপর হামলার ঘটনায় ফের কড়া বিবৃতি দিলেন সিভি আনন্দ বোস। তবে কি রাজ্যপাল 'ইউ টার্ন' নিতে শুরু করেছেন? যথারীতি রাজ্য রাজনীতিতে বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। আর সেই সঙ্গে বিজেপির রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি নিয়েও জল্পনা এখন তুঙ্গে। তাই আগামী দিনে আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে রাজভবন কোনও অ্যাকশন নেয় কিনা সেটাই দেখার।

Around The Web

Trending News

You May like