নয়াদিল্লি: একই রেল৷ পরিস্থিতিও এক৷ কিন্তু, বাংলাকে বঞ্চিত রেখে মুম্বইয়ে চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ বাংলায় পরিষেবা কবে চালু হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও করোনা আবহে মুম্বইয়ে সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে ছুটছে লোকাল৷ মুম্বইয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও বাংলায় এখনও লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে নিরুত্তর রাজ্য সরকার৷ বাংলায় নতুন করে রেল পরিষেবা চালু করার ইচ্ছে প্রকাশ করে দ্বিতীয় দফায় রাজ্যকে চিঠি পাঠাল রেল৷ পুজোর আগে লোকাল ট্রেন চলাচলের দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বঙ্গ বিজেপির সাংসদ৷ দ্রুত এবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছে বাম-কংগ্রেস৷ কিন্তু, রাজ্যের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া না আসায় গড়াচ্ছে না লোকাল ট্রেনের চাকা৷ লোকাল ট্রেন চালু না হওয়ায় সোনারপুর, হাওড়া, হুগলী-সহ জেলায় জেলায় ছড়িয়েছে পড়েছে বিক্ষোভ৷ যাত্রী বিক্ষোভের কথা তুলে ধরে দ্বিতীয় দফায় রাজ্যকে চিঠি পাঠাল রেল কর্তৃপক্ষ৷
করোনা আবহাওয়া কবে থেকে কীভাবে লোকাল ট্রেন চলবে, আলোচনার চেয়ে ফের রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ৷ দ্বিতীয় দফায় চিঠি পাঠিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যকে পাঠানো চিঠিতে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে৷ জানানো হয়েছে, স্পেশাল ট্রেনে উঠতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে৷ দিকে দিকে তৈরি হয়েছে বিক্ষোভ৷ বিক্ষোভের কথা উল্লেখ অবিলম্বে ব্যবস্থা দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে৷
করোনা আবহে কীভাবে লোকাল ট্রেন চলবে, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর কী হবে, তা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব রেল আলোচনা করতে চাইছে৷ পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে এই আলোচনা জরুরি বলেও জানানো হয়েছে৷ প্রয়োজনে এই আলোচনা ভিডিওকলে মাধ্যমে হতে পারে বলেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পূর্ব রেলের তরফে৷ আলোচনায় বসে কীভাবে লোকাল ট্রেন চালু করা হবে, কোন স্টেশনে ট্রেন থামবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ডাক দেওয়া হয়েছে৷ কেননা, লোকাল ট্রেন চালু না হওয়ায় যে সমস্ত সমস্যা তৈরি হচ্ছে, বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে, অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন বলেও উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে৷ ফলে, দ্রুত আলোচনার চেয়ে পূর্ব রেলে এডিএম রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়েছেন৷
করোনা আবহে ট্রেন চালু হলে কীভাবে তা শুরু হবে, কটি ট্রেন চালানোর যেতে পারে, কোন কোন স্টেশনে ট্রেন থামবে, কোন রুটে পরিচয় দেওয়া হবে, ইতিমধ্যেই তা নিয়ে গাইডলাইন তৈরি করে ফেলেছেন রেল৷ রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে সেই সমস্ত গাইডলাইন তুলে ধরা হবে বলে রেল সূত্রে খবর৷ যেহেতু আলোচনাই হচ্ছে না, ফলে সেই সমস্ত বিষয়গুলি কার্যকর করা যাচ্ছে বলে দাবি রেলের৷
আসছে পুজো৷ পুজোর আগে সাধারণ মানুষের স্বার্থে অবিলম্বে লোকাল ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিক রাজ্য৷ কেননা, লোকাল ট্রেন না চলার কারণে জেলায় জেলায় যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে বিপদ আরও বাড়বে পারে বলেও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন উদ্বোগ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী৷ চিঠিতে মান্নান-সুজনদের দাবি, করোনা সতর্কতা মাথায় রেখে ঠিক যেভাবে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে, ঠিক তেমনই লোকাল ট্রেন চালু হোক৷ রাজ্যের তরফে এনিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা৷ যদিও, বাংলায় লোকাল ট্রেন চালাতে চেয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিল রেল৷ সূত্রের খবর, সেই প্রস্তাবে এখনও কোনও জবাব দেয়নি রাজ্য সরকার৷
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বিরোধী দলের তরফে দাবি করা হয়েছে, আনলক পর্বে দোকান-বাজার, অফিস-কাছারি সব খুলে গিয়েছে৷ পুজোর কেনাকাটাতেও চলছে৷ রুটি-রুজির টানে সাধারণ মানুষকে তাঁদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে৷ কিন্তু গণপরিবহণ ব্যবস্থা এখনও দুর্বল৷ মিলছে না পর্যাপ্ত বাস৷ গন্তব্যে যেতে খরচ বাড়ছে৷ শহরতলিতে লোকাল ট্রেন চালু না হলে গণবিক্ষোভ আরও বাড়তে পারে বলেও করা হয়েছে আশঙ্কা৷ পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে চলে না যায়, আগাম সতর্ক করে লোকাল চালানোর বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত বলেও দাবি তোলা হয়েছে চিঠিতে৷ সমস্যা সমাধানে রেলের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত লোকাল ট্রেন চালু করতে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্যোগ নিতেও আর্জি জানানো হয়েছে বাম-কংগ্রেসের তরফে৷
করোনা আবহে সেই মার্চ থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা৷ করোনা-কালে ধাপে ধাপে সবকিছু চালু হয়ে গেলেও লোকাল ট্রেনে এখনও রয়েছে লকডাউনের গেরো৷ একদিকে করোনা আহবে প্রভাবিত জীবন, লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত জীবিকা৷ তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে জীবিকা বাঁচানোর লড়াই৷ করোনাকালে আগ্নিমূল্য বাজার, তার উপর দ্বিগুন বাস ভাড়া৷ আগে গন্তব্যে পৌঁছতে যত টাকা খরচ করতে হত সাধারণ যাত্রীদের, আজ সেই পথ যেতে লেগে খবর পড়েছে দ্বিগুন৷ সব মিলিয়ে নেজেহাল আম জনতা৷ আর এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে পুজো৷ ফলে, পুজোর আগে লোকাল ট্রেন না চললে পরিস্থিতি যা আরও ভয়ঙ্ককর হয়ে উঠতে পারে, তা বেমালুন জানে রাজ্য ও রেল কর্তৃপক্ষ৷ সাধারণ জনতা সমস্যায় পড়লেও এখনও নিরুত্তর প্রশাসন৷ আর তাতেই বাড়ছে জনতার ক্ষোভ৷ কেননা, বহু মানুষের অন্নসংস্থানের প্রধান মাধ্যম লোকাল ট্রেন৷ সেটাই যদি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকে, তাহলে কীভাবে চলবে সাধারণের জীবন? সাধারণ যাত্রীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের যথেষ্ট কারণ আছে৷ কিন্তু, তাতে কি? লোকাল ট্রেনের পরিষেবা নিয়ে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা’য় আর বাঁধা হয়ে উঠছে না রাজ্য ও রেলের সমন্বয়ের কারণে৷
করোনা মহামারী আবহে রেল কর্মী ও জরুরি কাজে যুক্তদের জন্য ইতিমধ্যেই স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু সেই স্পেশাল ট্রেনে ওঠার দাবি জানিয়ে চুঁচুড়া স্টেশনে এবার বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় যাত্রীরা৷ রেল লাইনে লোহার রড, গাছের ডাল ফেলে রেল অবরোধ করলেন ক্ষুব্ধ যাত্রীদের একাংশ৷ গতকাল হুগলীর পান্ডুয়া-সহ বিভিন্ন স্টেশনে হয়েছে বিক্ষোভ৷ আজ নতুন করে চুঁচুড়ায় রেল অপরাধের ঘটনায় অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে রেলপুলিশ৷ অন্যদিকে একই দাবি জানিয়ে সোনারপুরে সাধারণ যাত্রীদের একাংশ ইতিমধ্যেই লোকাল ট্রেন ভাঙচুরের চালিয়েছেন৷ সোনারপুর লোকাল ভাঙচুরের পর থেকেই রাজ্যের প্রতিটি লোকাল ট্রেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে রেল কর্তৃপক্ষ৷ অবাঞ্চিত যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তবে, সাধারণ যাত্রীরা কবে থেকে পরিষেবা পাবেন, তা নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ৷ এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি রাজ্য সরকার৷