বিজেপি ছাড়ছেন রাহুল সিনহা? পদ হারিয়ে মুকুল-অনুপমকে তীব্র খোঁচা ‘বিদ্রোহী’ রাহুলের

বিজেপি ছাড়ছেন রাহুল সিনহা? পদ হারিয়ে মুকুল-অনুপমকে তীব্র খোঁচা ‘বিদ্রোহী’ রাহুলের

 

কলকাতা: নজরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন৷ পাখির চোখ করে ইতিমধ্যেই দল গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে বঙ্গ বিজেপি৷ ইতিমধ্যেই রাজ্য কমিটির তালিকা ঘোষণা ঘোষণা করা হয়েছে৷ আজ নতুন করে সর্বভারতীয় স্তরে নিজের টিম সাজিয়ে নিয়েছেন সভাপতি জেপি নাড্ডা৷ আর সেই টিমে উল্লেখযোগ্যভাবে মুকুল রায়, অনুপম হাজরা, রাজু বিস্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে৷ কিন্তু বঙ্গ বিজেপির ৩ নেতার দায়িত্ব বাড়লেও রাজ্য কমিটি হোক কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটি, সমস্ত দিক থেকেই এবার বাদ পড়েছেন বিজেপির অন্যতম নেতা রাহুল সিনা৷ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ হারিয়ে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন রাহুল৷

কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদ হারিয়ে এবার সরাসরি মুকুল রায় ও অনুপম হাজরার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন রাহুল সিনহা৷ ৪০ বছর বিজেপিকে সেবা করার পর আজ এটাই পুরস্কার পেলাম৷ চরম ক্ষুব্ধ রাহুল৷ কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদ চলে যেতেই দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন রাহুল৷ সরাসরি মুকুল রায় ও অনুপম হাজরাকে বিঁধে বিজেপিতে তৃণমূল নেতাদের গুরুত্ব পাচ্ছে বলেও তুলেছেন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ৷ দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির নেতা৷

দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রাহুল সিনার মন্তব্য, ‘‘৪০ বছর ধরে বিজেপির সেবা এবং বিজেপির একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করছি৷ বিজেপির জন্মলগ্ন থেকে বিজেপির সেবা করার পুরস্কার এটাই যে, তৃণমূলের নেতা আসছে৷ তাই আমাকে সরে যেতে হবে৷ এর থেকে বড় দুর্ভাগ্যের কিছু হয় না৷ পার্টি যে আজ আমাকে পুরস্কার দিল, সেই পুরস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে কিছু আমি বলতে চাই না৷ আমি যা বলার ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে বলব এবং আমার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঘোষণা করে দেব৷’’

রাহুল সিনার এই বিদ্রোহ ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা৷ তাহলে কি পদ না পেয়ে এবার বিজেপি ছাড়বেন রাহুল সিনহা? নাকি দলের অন্দরে চাপ বারিয়ে পুরোনো পথ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবেন? নাকি রাহুলের বিদ্রোহ থামাতে অন্ততপক্ষে রাজ্য কমিটিতে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হবে? আর যদি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁর স্থান দেওয়া না হয়, তাহলে কি তৃণমূলের দরজা খোলা রয়েছে রাহুল সিনহার কাছে? কেননা তৃণমূল তো আগেই সবার জন্য দরজা খুলে দেওয়া প্রস্তাব দিয়ে রেখে৷ পদ না পেয়ে ভোটের আগে কি সেই সুযোগকে কাজে লাগাবেন ৪০ বছর বিজেপি করা রাহুল সিনহা? নাকি দলের অন্দরে গোপনে গোলবে বরফ? সময়ের গর্ভে জবাব লুকিয়ে থাকলেও জানতে কৌতূহল বাড়ছে বিজেপির নিচু তলার কর্মী মহলে৷

আজ কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে তালিকা প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, সহ সভাপতির পদে এখন থেকে দায়িত্ব দেবেন মুকুল রায়৷ মুকুল ছাড়াও সেখানে নাম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আরও ২ নেতার৷ নাম রয়েছে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা ও প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরা৷  রাজু বিস্তা পেয়েছেন জাতীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব৷ অনুপম হাজরা পয়েছেন সর্বভারতীয় সম্পাদকের পদ৷ শনিবার প্রকাশিত তালিকায় মুকুলের সঙ্গে সহ সভাপতির দায়িত্বে পেয়েছেন ছত্তিসগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং, রাজস্থানের প্রাপ্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, ওড়িশার জয় পান্ডা৷

বিজেপিতে যোগদানের পর এই প্রথম মুকুল রায় দলের অন্দরে কোনও পদ পেলেন৷ তাঁর পদ নিয়ে দড়ি টানাটানি অব্যাহত ছিল৷ সম্প্রতি বিজেপির নবগঠিত রাজ্য কমিটিতে মুকুলের ঠাঁই হয়নি৷ এর পরই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে মুকুল শিবিরে৷ দিল্লিতে দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছেড়ে ফিরে আসেন বাংলায়৷ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে মুকুলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা৷ মুকুল-দিলীপের দ্বন্দ্ব ঘিরেও তৈরি হয় বিতর্ক৷ বিদ্রোহ রুখতে মাঝে মুকুলকে মন্ত্রী করা হতে পারে বলে শোনা যায়৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাংগঠনিক পদে বড় দায়িত্ব পেলেন মুকুল৷ বিজেপির গঠনকাঠামোর দ্বিতীয়  সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ সহ সভাপতি৷ ফলে, এখন থেকে তিনি সরাসরি জেপি নাড্ডার টিমেই থাকবেন৷

তালিকায় উল্লেখযোগ্যভাবে সর্বভারতীয় সম্পাদকের পদ পেয়েছেন অনুপম হাজরা৷ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই পুরোনো দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন অনুপম৷ যাদবপুরে মিমির কাছে হারলেও ময়দান ছাড়েননি৷ যুব মোর্চার নানা কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে৷ অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ ও পাহাড়ের রাজনীতিতে প্রভাব বাড়তে সর্বভারতীয় মুখপাত্রের তালিকায় দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তাকে দেওয়া হয়েছে বাড়তি দায়িত্ব৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =