ফের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু করতে চলেছেন রাহুল গান্ধী! অভিষেকও কি শুরু করবেন যাত্রা?

ফের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু করতে চলেছেন রাহুল গান্ধী! অভিষেকও কি শুরু করবেন যাত্রা?

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাহুল গান্ধীর কামব্যাক। মোদি  পদবি মামলায় সুরাটের আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এরপরই সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছেন রাহুল। আর বুধবার সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্কে অংশ নিয়ে রাহুল গান্ধী মণিপুর ইস্যু তুলে যেভাবে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন তাতে বেশ চাঙ্গা কংগ্রেস। এর  আগেই রাহুল ঘোষণা করেছিলেন শীঘ্রই তিনি ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবেন। যে যাত্রা শেষ হতে পারে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ে। তার আগেই সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যেভাবে রাহুল ঝড় তুলে দিলেন, তা নিঃসন্দেহে চিন্তা বাড়িয়েছে বিজেপির। তবে শুধু বিজেপি নয়, রাহুলের সাড়া জাগানো কামব্যাকে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে পারে তৃণমূল।

বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূলও রয়েছে। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি। রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব, বা বলা ভাল খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আগের মতোই তৃণমূলের বিরোধিতা করে চলেছেন। প্রকাশ্যে না বললেও কংগ্রেসের বক্তব্য স্পষ্ট, ‘ইন্ডিয়া’ জোট ক্ষমতায় আসলে রাহুল গান্ধীকেই প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। যা তৃণমূল কতটা মানতে চাইবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। সেই জায়গা থেকে কংগ্রেস তথা অন্য বিরোধীদের চাপে রাখতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ করতেই পারেন। কারণ রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র পরই সেই ধাঁচে অভিষেক ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’  বা ‘নবজোয়ার যাত্রা’ করেছিলেন।এই পরিস্থিতিতে রাহুল দ্বিতীয়‌ বার ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ করলে  অভিষেক সেই পথে হাঁটবেন কিনা  তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে।  

তবে রাহুলের দেখাদেখি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন সেটা কিন্তু মানতে চায়নি তৃণমূল। এটা তৃণমূলের স্বতন্ত্র কর্মসূচি ছিল বলেই দাবি করা হয়। কিন্তু রাহুলের কর্মসূচির সঙ্গে অভিষেকের ‘নবজোয়ার যাত্রা’র মিল ছিল বলে প্রশ্নটা ওঠে। তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিল তৃণমূল। তাই আগামী দিনে অভিষেক ‘নবজোয়ার’ বা সেই ধাঁচের কোনও কর্মসূচিতে সামিল হন কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল থাকবেই।

ঘটনা হল কংগ্রেস মনে করে রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। রাহুলের কর্মসূচির পরেই কর্ণাটকে বিপুল জয় পেয়েছে কংগ্রেস। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল ফের এই কর্মসূচিতে সামিল হলে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা যে আরও চাঙ্গা হবেন সেটা স্পষ্ট। এক বছর আগেও রাহুলকে নিয়ে শীর্ষ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে যথেষ্ট অ্যালার্জি লক্ষ্য করা যায়। যে কারণে কংগ্রেস ছাড়েন কপিল সিব্বল, গুলাম নবি আজাদ-সহ বেশ কয়েকজন। সেই সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ ‘জি-২৩’ গোষ্ঠী। সেই বিদ্রোহে যথেষ্ট চাপে পড়ে যায় গান্ধী পরিবার। কিন্তু সেসব এখন অতীত। দলের মধ্যে যে বিদ্রোহ হয়েছিল তা সুন্দরভাবে সামলে নিয়েছেন রাহুল। কংগ্রেসকে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ লাগছে। দলের সর্বস্তর থেকে বহু আবেদন আসলেও কংগ্রেস সভাপতি হননি রাহুল। রীতিমতো নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি হয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেই জায়গা থেকে অন্যধারায় রাজনীতি করে কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাহুল।

রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন রাহুল যেভাবে এত বেশি মাইলেজ পাচ্ছেন তা হয়ত তৃণমূল চাইছে না। সেক্ষেত্রে বিরোধী জোটকে আগামী দিনে কংগ্রেসই কন্ট্রোল করবে, তৃণমূলের হাতে ততটা ক্ষমতা থাকবে না, এমনটাই আশঙ্কা বাংলার শাসক দলের। উল্লেখ্য বিরোধী জোট ক্ষমতায় আসলে প্রধানমন্ত্রীর আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে চায় তৃণমূল। তাই সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পর রাহুল গান্ধীর যেভাবে নতুন করে উত্থান হল, তা কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে তৃণমূলকে। যদিও তৃণমূল রাহুলের পাশেই রয়েছে। কোনও ভাবেই রাহুল বিরোধী একটি শব্দও তারা উচ্চারণ করেনি। তবে কি সবটাই জল্পনা? নাকি কিছু না বলা কথা রয়েছে? সবমিলিয়ে রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র দ্বিতীয় পর্বের দিকে নজর থাকবে সবারই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + five =