পুলিশ সিবিআই এর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে! ওই রাতে কোথায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী?

কলকাতা: আরজিকরে তুলকালাম কান্ড। শুধু পুলিশ নয়, প্রশ্নের মুখে সিবিআই ও। ওই সময় কোথায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী? তদন্তভার টেকওভার করার পর তাদের দায়িত্বটা কি? রাত…

Picsart 24 08 16 02 47 54 746

কলকাতা: আরজিকরে তুলকালাম কান্ড। শুধু পুলিশ নয়, প্রশ্নের মুখে সিবিআই ও। ওই সময় কোথায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী? তদন্তভার টেকওভার করার পর তাদের দায়িত্বটা কি?

রাত দখলের রাতে আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে তা চোখে দেখা যায় না। এই ঘটনা থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে। হাসপাতালের গেট, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে একদল মানুষ হাসপাতালের ভেতরে ঢুকলো। পড়ুয়াদের ধরনা মঞ্চ থেকে শুরু করে গোটা হাসপাতালে ভাঙচুর চালালো। ওষুধ, সরঞ্জাম সমস্ত কিছু নষ্ট করা হলো। পাথর ছুঁড়ে একাধিক ওয়ার্ডের কাঁচ ভাঙা হলো। পুলিশের গাড়ি ভাঙা হলো। আর পুলিশ, যারা রক্ষক, তারাই কিনা কখনো প্রসূতি বিভাগে ঢুকে, কখনো শৌচাগারে আশ্রয় চেয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচালো? রোগীর কম্বলের তলায় ঢুকে নিজেদের সেভ করলো? তাহলে সাধারণ মানুষ ভরসা রাখবে কাদের উপর? নার্সিং স্টাফ, রোগী, রোগীর পরিজন তাদের আস্থার জায়গা কোথায়?

কিছুক্ষণ পর দুষ্কৃতীরা হাসপাতাল ছাড়তেই পুলিশ বেরোয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। রেফ নামানো হয়। পুলিশের উপর শুরু হয় ইঁট বৃষ্টি। রক্ত ঝড়ে পুলিশের। তার মধ্যেই বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়। হামলাকারীদের একাংশকে তাড়া করে এলাকা ছাড়া করে পুলিশ। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এই হঠাৎ হামলার ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ করলো না পুলিশ? ঘটনাস্থলের আইন-শৃঙ্খলার রক্ষার দায়িত্ব ছিল তো পুলিশ। তাহলে প্রায় আধঘন্টা ধরে কিভাবে তান্ডব চালাতে পারল বহিরাগতরা?

না শুধু পুলিশ না। সিবিআই কি করছিল? সেটাও তো বড় প্রশ্ন। হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, সিবিআইয়ের ভূমিকাও তো প্রশ্নচিহ্নের মুখে। কারণ আমরা জানি, বর্তমানে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেছে সিবিআই। বিগত কিছু তদন্তে দেখা গিয়েছে, যেখানেই সিবিআই যায়, সেখানেই তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যায়। বুধবারেও দুপুরে সিবিআই এর তদন্তকারী আধিকারিকরা যখন আরজি করে এসেছিলেন তখন তাদের সাথে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনার তদন্তে যে সংস্থা তারা কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে আগে থেকেই সুরক্ষিত করল না ঘটনাস্থল? বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে এভিডেন্স নষ্ট করার লক্ষ্যে এটা পরিকল্পিত হামলা। যদি সেটাও হয়ে থাকে তাহলে সিবিআইয়ের উপরেও তো দায় বর্তায় ওই ঘটনাস্থলকে প্রপারলি সেফটি এবং সিকিউরিটি দেওয়া। কেন আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে মোতায়েন করা হল না? না, এর কোনো সদুত্তর নেই।

যদিও অলরেডি পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে, আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে।

কিন্তু সিবিআই এর তদন্তভার গ্রহণ করার পর ৪৮ ঘন্টা পার। আদৌ কি তদন্তে কোন অগ্রগতি দেখা গেছে? সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় কে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তারপর সিবিআই কাউকে গ্রেফতার করতে পেরেছে এখনও পর্যন্ত? হ্যাঁ অবশ্য আর জি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকালে তবে এখানে একজন সিবিআই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চায় সেমিনার হল পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা পৌঁছতে পেরেছিল কিনা। তাহলে কি খোঁজ নিয়েই দায় সরলো সিবিআই এর তদন্তকারী আধিকারিকরা?আন্দোলনকারীদের একাংশ এই প্রশ্নও তুলছে। একই সঙ্গে আরজি কর হাসপাতালে নার্সিং স্টাফরা আতঙ্কিত। তারা বৃহস্পতিবার দুপুরে অধ্যক্ষকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ নয়, নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানানো হয়।

এসবের মধ্যে আরজি করে মহিলা চিকিৎসক কে ধর্ষণ খুনের ঘটনায় সুবিচারের জন্য যে লড়াই, তাতেও লাগানো হচ্ছে রাজনৈতিক রং। শাসক দল কে দুষছে বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন শুভেন্দু থেকে সুকান্তরা। বন্ধ অবরোধ মশাল মিছিল এর প্ল্যানিং চলছে। পাল্টা শাসক দলের তরফে বিরোধীদের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে। এই এত কিছুর মধ্যে থেকে আদেও কি আরজিকর কাণ্ডে নিহত মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘৃণ্য অপরাধের সুবিচার পাওয়া যাবে? উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভে।