কলকাতা: গড়িয়া মহাশ্মশানে বেওয়ারিশ লাশ বিতর্কে ফের রাজ্যকে খোঁচা দিলেন রাজ্যপাল৷ গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুললেন রাজ্যে সাংবিধানিক প্রধান৷ ওই ১৪ জন যদি আপনার আত্মীয় হতেন, তাহলে কী করতেন? মুখ্যমন্ত্রীকে এবার সরাসরি ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণে নামলেন রাজ্যপাল৷ শ্মশান-কাণ্ডে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করারও আর্জি জানিয়েছেন তিনি৷
আজ ফের রাজ্যপাল টুইট করেন রাজ্যপাল৷ মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্র সচিব, ফিরহাদ হাকিমকে নিশানাও করেছেন তিনি৷ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘মৃতদেহ টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভয়ঙ্কর৷ এই ঘটনা বহুদিন আমাদের তাড়া করবে৷ মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করুন৷ এই বর্বরতা মানবতার কলঙ্ক৷ ভিডিওটি ভুয়ো বলা ক্ষমাহীন ভুল৷ নির্লজ্জভাবে অপমানের পর ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, যাঁদের অঙ্গুলিহেলনে এই প্রতিক্রিয়া, তাঁরা কল্পনাও করতে পারছেন না, যে এই অপরাধের জন্য সাধারণ মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷ প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে ভাবুন, মৃত ১৪ জনের মধ্যে যদি কেউ আপনার আত্মীয় হতেন?’’
এখানেই থামেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর৷ পরবর্তী টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘আশা করব, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব এবং কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে যত শীঘ্র সম্ভব বিশদ তথ্য পেয়ে যাব৷ চেয়ারপারসন ফিরহাদ হাকিম, আশা করব এই ভয়ঙ্কর ঘটনা সম্পর্কে আপনি আমাকে দ্রুত সমস্ত কিছু জানাবেন৷ এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়৷ তথ্য গোপন করলে ফল হবে মারাত্মক৷’’ টুইটারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যপাল৷
আঁকশি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে মানুষের দেহ নিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ, অকল্পনীয় দৃশ্য বহুদিন অমলিন থাকবে। @MamataOfficial এর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। এই বর্বরতার কলঙ্ক মোছা মুশকিল। মৃতদেহ সৎকার একটি পবিত্র কর্ম।(1/3)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) June 14, 2020
রাজ্যের HomeSecretaryWB এবং কলকাতা পুরসভার কাছে যা জানতে চেয়েছি, আশাকরি দ্রুত তা জানানো হবে। আশা করি,পুর প্রশাসক @FiradHakim পরিস্থিতি জানিয়ে যাবেন। সংবেদনশীল এবং আবেগপূর্ণ এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার মূল্য 'এমএপি'ত্রয়ীকে দিতে হবে।(3/3)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) June 14, 2020
অন্যদিকে গতকাল রাজ্যপালকে ঘুরিয়ে জবাব দিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর৷ টুইটার বার্তায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘‘মৃতদেহের মর্যাদা দিতে জানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ করোনা পরিস্থিতিতে সব ধরনের স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করা হচ্ছে৷ মৃতদের শোকগ্রস্ত আত্মীয়দের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেওয়া হয়েছে৷ এটাই আসল ঘটনা৷ সম্প্রতি যে ঘটনার কথা আলোচিত হচ্ছে, সেটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ দুর্ঘটনায় মৃতদেহের সৎকারের জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ এর সঙ্গে করোনা অতিমারীর কোন সম্পর্ক নেই৷ রাজ্যপালকে এই বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা৷ বারবার ব্যাখ্যা করা সত্ত্বেও এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে অতিমারীর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ায়, সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে৷ এইটা প্রশাসনকে নিরুৎসাহী করার চেষ্টা৷ স্বাস্থ্যকর্মী, করোনাযোদ্ধাদের এতে মর্যাদাহানি হচ্ছে৷ গোটা পশ্চিমবঙ্গ এখন করোনা ও ঘূর্ণিঝড়ের জোড়া আঘাতের মোকাবিলা করছে৷ এই পরিস্থিতিতে এমন অসত্য ভাষণের নিন্দা করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷’’
কিন্তু শ্মশান-কাণ্ড নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত যখন সপ্তমে, ঠিক তখন মাঠে নেমেছে তৃণমূল-বিজেপি শিবির৷ রাজ্যপালকে আক্রমণ চালিয়েছে তৃণমূল সাংসদের একাংশ৷ পাল্টা আসরে নেমেছেন বিজেপি সাংসদরা৷ কিন্তু শ্মশান কাণ্ড নিয়ে একের পর এক তর্ক-বিতর্ক দেখা দিলেও গোটা ঘটনাটি যদিও অমানবিক, অশোভনীয়, এক বাক্যে মনে করছেন রাজ্যের সাধারণ জনতা৷ আর এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ির পরিবর্তে কেন গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হচ্ছে না? এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাধারন জনতা৷ যদিও সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে মৃতদেহের সৎকারের অধিকার সুনিশ্চিত করা আছে৷ কিন্তু ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যাওয়া মৃতদেহের সঙ্গে অমানবিক আচরণ, সংবিধানের অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাধারন জনতা৷