পণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সিঁদুর দানের পর বিয়ে ভাঙল কনে

পণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সিঁদুর দানের পর বিয়ে ভাঙল কনে

ইংরেজবাজার: পণপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সিঁদুরদানের পরেও ছাদনাতলায় নিজের বিয়ে ভেঙে দিলেন পাত্রী। মঙ্গলবার রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদা থানার মঙ্গলবাড়ী এলাকায়। নারী সত্ত্বাকে অপমান করা হয়েছে জনসমাজের কাছে। পণপ্রথার বিরুদ্ধে নারীদের নিয়ে যে অত্যাচার চলছে তারই তীব্র প্রতিবাদ করে ছাদনাতলা নিজের বিয়ে ভেঙে প্রতিবাদী পাত্রী সকলকে হতবাক করে দিয়েছেন। তার এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। যদিও এই ঘটনাটি নিয়ে পাত্র পক্ষের বিরুদ্ধে পণ প্রথার আইন অনুযায়ী পুরাতন মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই পাত্রীর পরিবার। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ।

যদিও বুধবার সকাল থেকেই মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণেই ওই পাত্রীর বাড়িতে ছিল শুধু হতাশা এবং কান্নার রোল। কিন্তু এতটুকু হলেও নিজে ভেঙে পড়েননি ওই পাত্রী। তার এই সাহসিকতার মনোভাবকে ঘিরে কুর্নিশ জানিয়েছে এলাকার বাসিন্দারা।  তাঁরা এখন পাত্র পক্ষের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরাতন মালদা পুরসভা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খয়েরাতি পাড়া এলাকার জনৈক ব্যবসায়ী নিশীথ কুন্ডুর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় মঙ্গলবারড়ি এলাকা ওই পাত্রীর। মঙ্গলবার রাতে ধুমধাম করে ছাঁদনাতলায় পাত্র- পাত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। আর সেই সময় পণ নিয়েই শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে গোলমাল। এমনকি পাত্রীকে শ্বশুর বাড়িতে গেলে দেখে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় পাত্রপক্ষের তরফ থেকে বলে অভিযোগ। এরপর এই বিয়ের আসরে সিঁদুরদান হয়ে গেল প্রতিবাদে সরব হন ওই পাত্রী। এরকম ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আর স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে যেতে রাজি হননি। পাশাপাশি  বিয়ের আসরে পণপ্রথার বিরুদ্ধে নিজেই হবু স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান ওই পাত্রী। যার ফলে খালি হাতেই ছাদনাতলা থেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয় পাত্রপক্ষকে। পরে পুলিশে পুরো ঘটনাটি নিয়ে নালিশ জানায় পাত্রীর পরিবার।

ওই পাত্রীর এক মেসো সীতারাম চক্রবর্তীর বলেন, ভাগ্নির বিয়েতে আমরা পাত্রকে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা,  ৮ ভরি সোনার অলংকার, ঘরোয়া আসবাবপত্র সবই দিয়েছিলাম। শুধু একটা টিভি দেওয়া বাকি ছিল। সেটিও কিনে বাড়িতেই রাখা ছিল । বিয়ের পর সেটি দেওয়ার কথা জানানো হয় পাত্রপক্ষকে। কিন্তু পাত্রপক্ষ সামান্য টিভি না পাওয়াতেই দুর্ব্যবহার শুরু করে দেয়। গোলমাল করে ওরা। এমনকি মেয়ের বাবা ও আত্মীয়স্বজনদের ধাক্কাধাক্কি করে বিয়ের আসরে। পাত্রীকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালানোর হুমকিও দেওয়া হয়। এতেই আমরা ঘাবড়ে যায়। আমরা মেয়ের নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। কিন্তু ততক্ষণে বিয়ের আসরে পাত্রী এরকম আচরণ ও পণপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যেতে চায়নি।

সীতারামবাবু আরও বলেন, ভাগ্নির সিঁদুরদান হয়ে গিয়েছিল। বিদায় বেলাতে যখন এরকমভাবে পণ নিয়ে গোলমাল বাঁধে। তখনই পাত্রী নিজেই এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যেতে রাজি হয়নি। তাঁর এমন সিদ্ধান্তকে আমরা কুর্নিশ জানিয়েছি। যারা এরকম ভাবে বিয়ের আসরে পাত্রী ও তার পরিবারকে হুমকি দিতে পারে। তারা ভবিষ্যতে পাত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গিয়ে যে অত্যাচার চালাবে তাও পরিষ্কার। তাই বিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেয়ের বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কতটা দুঃখ জনক ঘটনা তা আমরা বুঝতে পারছি। পরিবার ভেঙে পড়লেও, ভাগ্নির সাহসিকতা এবং মনোবল দেখে তাকে কুর্নিশ জানিয়েছি।

ওই পাত্রী বলেন, যারা সামান্য একটা টিভি না পেয়ে আমাকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তাদের সঙ্গে সংসার করাটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি চাই এরকম ভাবেই পণপ্রথার বিরুদ্ধে অত্যাচারিত মেয়েরা নিজেদের প্রতিবাদ গড়ে তুলুক। যদিও পাত্রীর পরিবারের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাত্রপক্ষ। পাত্র নিশীথ কুন্ডু বলেন, বিয়ে করতে যাওয়ার পর থেকেই পাত্রীপক্ষের অনেকেই তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। এমনকি আমার দিদি-বোনেদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয় । ডিজে'র সাথে নাচতে বাধ্য করা হয়।  অশালীনের মতোন টাকা উড়িয়ে মেয়েদের নাচতে বাধ্য করা হয়। এরকম অপমানজনক ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম।  আমাদের কোন দাবি-দাওয়া ছিল না। ওরাই যা যা দিয়েছিল তা ফিরিয়ে দিয়েছি । তবে বুধবার ছিল বধূবরণ বিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এদিন পাত্রপক্ষের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *