কলকাতা: শুক্রবার নবান্নের বৈঠকে সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অন্তর্গত একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই সঙ্গে রাজ্যবাসীর সমস্যা সমাধানে ভর্তুকি দিয়ে সমস্ত বেসরকারি বাস চালানোর কথা ঘোষণা করলেন তিনি৷ ১ জুলাই থেকে মেট্রো চলানোর ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
এদিনের বৈঠকে প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১০-১১ সালে সংখ্যালঘু বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪৭২ কোটি টাকা৷ ২০২০ সালে তা বেড়ে ৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা হয়েছে৷ ২ লক্ষ ৩৮ কোটি স্কলারশিপ বা বৃত্তি দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, সর্বোচ্চ সংখ্যালঘু স্কলারশিপ দিয়েছে রাজ্য৷
সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এছাড়াও তিনি জানান, ৫৫১ কোটি টাকা খরচ করে পার্ক সার্কাসে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া ক্যাম্পাস তৈরি করা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, এবার থেকে একলব্য স্কুল চালাবে রাজ্য সরকার৷ এছাড়াও তিনি জানান, প্রত্যেক জেলায় সংখ্যালঘু ভবন তৈরি করা হয়েছে৷ সংখ্যালঘুদের জন্য ৫৪৩টি হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে৷ ৮টি নতুন পলিটেকনিক, ৩৯টা নতুন আইআইটি গড়ে তোলা হয়েছে৷ গত কয়েক বছরে ৮৫ হাজার মানুষ হজে গিয়েছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘুদের মতো উপকৃত হচ্ছেন রাজ্যের তফশিলি জাতি-উপজাতির মানুষরাও৷ তাঁদের জন্যও রয়েছে একাধিক প্রকল্প৷ এবার থেকে তাঁদেরও বৃত্তিও দেওয়া হবে৷ কেন্দ্র বৃত্তির টাকা না দিলে রাজ্য সরকারই তা দেবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বেশ কিছু ছাড় দিয়েই লকডাউন চলছে রাজ্যে৷ ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লকডাউন চলবে৷ ৩১ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন জারি থাকবে৷ এই সময় কোনও রকম সমাবেশ করা যাবে না৷ করোনা পরিস্থিতিতে লডাউনে অন্যান্যবারের মতো এই বছর ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ করাও সম্ভব হবে না৷ অথচ কিছু কিছু রাজনৈতিক দল পুলিশের অনুমতি না নিয়ে গায়ের জোড়ে লকডাউন আইন ভেঙে ইচ্ছে মতো মিছিল মিটিং করছে৷ আইন ভাঙলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে৷ সুর চড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আইন ভাঙবেন, আবার বলবেন কেন এফআইআর!’ তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলি আইন নিয়ে ছেলেখেলা করছে৷ রাজ্যে ভাষা সন্ত্রাস চলছে৷ এই ভাষার সন্ত্রাস মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷
তিনি জানান, কলকাতায় ১,৬০০ সরকারি বাস চলছে৷ পয়লা জুলাইয়ের মধ্যে আরও ৫০০ টি বাস রাস্তায় নামবে৷ গ্রাম বাংলাতেও বাস চলছে৷ তবে যে ভাবে তেলের দাম বাড়ছে ও সরকারি নিয়ম মেনে বাস চালাতে হচ্ছে তাতে ৬ হাজার বেসরকারি বাসের মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার বাস চলানো হচ্ছিল৷ তাই ১ জুলাই থেকে সমস্ত বেসরকারি বাসকে রাস্তায় নামাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, মানুষের কথা ভেবে বাসের ভাড়া বাড়ানো সম্ভব নয়৷ তাই প্রতিটি বাসকে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেবে রাজ্য সরকার৷ এর জন্য সরকারের ২৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলেও জানান তিনি৷ এছাড়াও এবার থেকে বাসের চালক ও কন্ডাক্টরদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা হচ্ছে। এই প্রকল্পের সুবিধা মিলবে ভেলোর ও এইমস হাসপাতালেও।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা টেস্ট করাতে ৪ হাজার ৫০০ টাকার করে নিচ্ছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলি৷ কিন্তু রাজ্য সরকারে করোনা পরীক্ষার খরচ ২,২৫০ টাকা বেধে দিয়েছে৷ ইনডোর রোগীর ডাক্তারের সঙ্গে কনসাল্ট ফি ৫০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, মেট্রো রেলের সঙ্গেও কথা চলছে৷ স্যানিটাইজ করে যতগুলো সিট রয়েছে, যদি ততজন যাত্রীকে মেট্রোতে ওঠার অনুমতি দেওয়া যায়, তাহলে মেট্রো চালানো যেতে পারে৷ ১ জুলাই থেকে মেট্রো পরিষেবা চালুরও প্রস্তাবও দেন তিনি।
তাঁর অভিযোগ, বিদেশি বিমানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না৷ বলা হয়েছিল, যাঁরা বিদেশ থেকে আসবেন তাঁদের সাত দিন ইনস্টিটিউশানল কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে৷ কিন্তু দেখা গিয়েছে বাস্তবে তা হচ্ছে না৷ বিমানে ওঠার আগে বিস্তারিত তথ্য লিখতে বলা হচ্ছে৷ কিন্তু তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে না৷ স্বাস্থ্য প্রোটোকল মানা হচ্ছে না৷ রাজ্য তাহলে কী করে করোনা মোকাবিলা করবে? অবিলম্বে বিদেশি বিমান বন্ধ করতে হবে৷ গোষ্ঠী সংক্রমণ হলে কিছু করার থাকবে না৷ বিদেশি বিমান পরিষেবা বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে মুখ্য সচিব৷ কেন্দ্রকে চিঠি পাঠাবেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ সেইসঙ্গে যে সকল রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বেশি সে সকল রাজ্য থেকে ডমেস্টিক ফ্লাইট আসাও জুলাই মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি৷ তাঁ মতে, ১৫ দিনে একটা আন্তদেশীয় বিমান এবং মাসে একটি বিদেশি ফ্লাইট চালানো যেতে পারে৷