ছট উপলক্ষ্যে আদালতের রায় ঘিরে এ রাজ্যের শাসক দল ও বিরোধীদের রাজনীতি

ছট উপলক্ষ্যে আদালতের রায় ঘিরে এ রাজ্যের শাসক দল ও বিরোধীদের রাজনীতি

তপন মল্লিক চৌধুরী :  করোনাকালে ছটপুজো উপলক্ষ্যে নদী, পুকুর ও অন্য জলাশয়গুলিতে যাতে লোকসমাগম না হয় তার জন্য দেশের কয়েকটি রাজ্যের সরকার বিভিন্ন নিষেধ জারি করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হয় দিল্লির কেজরীওয়াল সরকারের নির্দেশ। তারা আগেই ঘোষণা করে; দিল্লির নদী কিংবা অন্য জলাশয়গুলিছটপুজো উপলক্ষতেসর্বসাধারণ ব্যবহারকরতে পারবে না। দিল্লি সরকারের ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ‘দুর্গা জনসেবা ট্রাস্ট’ ছটে অন্তত এক হাজার মানুষের জমায়েতের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল। কিন্তু বিচারপতিরা মামলাকারীদের জানায়, যেখানে দিল্লি সরকার বিয়েতে ৫০ জনের বেশি মানুষকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না সেখানে দুর্গা জনসেবা ট্রাস্ট ১০০০ জনের অনুমতি চাইছেন কী ভাবে? এর  আগেবিজেপি রাস্তায় নেমেছে, মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারছটপুজো উপলক্ষ্যে নদী বা অন্যান্য জলাশয় ব্যবহারেকোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করে নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ বাড়ির মধ্যেই ছটপুজো করার জন্য মানুষের কাছে আবেদন করেছেন। ছট উৎসবে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেনবিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও।ঝাড়খণ্ড রাজ্যের হেমন্ত সোরেন সরকার প্রথমে নদী, জলাশয়গুলিতে ছটপুজো নিষিদ্ধ করলেও পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর কাছে বাড়িথেকে ছট উৎসব পালনেরআর্জি জানিয়েছেন। মুম্বইতেও সমুদ্র, নদী কিংবা জলাশয়ের পাশে ছটে জমায়েত করা যাবে না বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত; গত বছর ছট পুজো উপলক্ষ্যে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে রবীন্দ্র সরোবরে ধুন্দুমার কাণ্ড ঘটেছিল। পুণ্যার্থীর দলপুলিশের সামনেই সরোবরের গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকে৷ ১৮টি গেটে কোনো পুলিশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ ওঠে৷ ‘দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস’ বলে পরিচিত রবীন্দ্র সরোবর হাজার হাজার পূণ্যার্থীদের ভিড়ে দূষণের কবলে পড়ে৷পরিবেশকর্মীরা অভিযোগ করে,রাজনৈতিক কারণেই প্রশাসন পুণ্যার্থীদের আটকায়নি৷অথচ ছট উপলক্ষে সেখানে নাকি বিশেষ সতর্কতা টাঙানো হয়েছিল৷ পুলিশ মোতায়েনেরও কথা ছিল৷

এ বছর কলকাতা হাইকোর্টরবীন্দ্র সরোবর বা সুভাষ সরোবরে ছট উৎসব পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকারি সূত্রের দাবি, কলকাতা এবং আশপাশে ১৩০০-র মতো জলাশয় খনন করা হয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলি কৃত্তিম জলাশয়। জলাশয়গুলিতে অনেকগুলি ঘাটও নির্মান করা হয়েছে। সরকার চায়, ছটে মানুষ সেগুলি ব্যবহার করুক। ছটপুজোর দিন রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবরে যাতে পূণ্যার্থীদের সমাগম না হয় তার জন্য গেটে তালা দিয়ে রাখা হবে।কিন্তু তালা তো গতবারও দেওয়া ছিল।আর সুভাষ সরোবরের একটা বিশাল অংশই যে অরক্ষিত, সেক্ষেত্রে কই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্র সরোবরেরও একটি অংশের অবস্থা প্রায় সেরকম।

পরিবেশ দূষণ রুখতে কলকাতা হাইকোর্টেরনিষেধাজ্ঞাকেরাজ্য সরকার মান্যতা দিলেও বিজেপিখোলাখুলি তার সময়ালোচনা করেছে। তাঁরা এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন দেখছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে সায়ন্তন বসু রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘শুধু দুর্গাপুজো, ছটে আদালতের নির্দেশ মানবে আর অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে মানবে না, সরকারের এই দু’রকম নীতি আমরা মানি না’। তিনি এ বলেন,বিজেপি ক্ষমতায় এলে ছটপুজো বা ইদ যে কোনও উৎসবেই আদালতের রায় মানা হবে। বিজেপির এই বক্তব্যের নিন্দা করেছেবিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস দুই দলই। তাদের বক্তব্য, বিজেপি করোনাকালেও পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি নিষেধকে অমান্য করতে চাইছে। কেন্দ্রের এইশাসক দলটিরাজ্যে মৌলবাদী পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।

সামনে বিধানসভা ভোট। এই কথা প্রতিটি রাজনৈতিক দল খুব ভালভাবে মাথায় রাখেন। তারা জানেন এ রাজ্যে কত শতাংশ হিন্দিভাষী মানুষ বাস করেন। তাদের ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে তারা যে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না বা বক্তব্য রাখবেন না তা বলাই বাহুল্য। তাই রাজ্যের শসক দল আদালতের বক্তব্যকে গ্রহণ করে বিকল্প ব্যবস্থায় উদ্যোগী হয়েছেন। বিরোধী বাম ও কংগ্রেসও আদালতের বিধিনিষেধকেই মান্যতা দিয়েছেন। কিন্তু এ রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া বিজেপি হিন্দিভাষী মানুষদের মন পেতে পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার থেকে তাদের ধর্মীয় আচরণের আবেগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। কিছুটা হলেও ধর্মীয় আবেগকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন গতবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছটপুজোর আগেই বলে দিয়েছিলেন, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কেউ ঘাটে চলে গেলে তিনি পুলিশকে লাঠি গুলি চালাতে বলবেন না৷ তার ওই কথার মধ্যেই পুণ্যার্থীদেরপ্রচ্ছন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়েছিল৷ তাই রবীন্দ্র সরোবরেই অন্তত ২০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 2 =