ভিলেন ‘রাজনৈতিক কারণ’, দাম্পত্য কলহ আগেও দেখেছে বাংলা

কথায় আছে, প্রফেশনাল আর পার্সোনাল রিলেশন গোলাতে নেই।

কলকাতা: কথায় আছে, প্রফেশনাল আর পার্সোনাল রিলেশন গোলাতে নেই। দুটোর মধ্যে যদি ফারাক না করা যায় তাহলেই বিপদ। যে কাজই আপনি করুন না কেন, নিজের কাজের সঙ্গে যদি ব্যক্তিগত ব্যাপার জড়িয়ে ফেলেন তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। এর সবচেয়ে বড় বড় উদাহরণ হয়তো রাজনীতিই আমাদের দেখিয়েছে। মূলত বাংলার রাজনীতি নিয়ে যদি কথা বলা যায়, তাহলে রাজনৈতিক কারণে ঘর ভাঙ্গার উদাহরণ অনেক আছে। আজ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর স্ত্রী সুজাতা খাঁকে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। রাজনৈতিক কারণে তাদের ঘর ভাঙতে চলেছে, তবে অবশ্য ভাবে তারা একমাত্র উদাহরণ নন। কারণ এর আগে বাংলার রাজনৈতিক মহল চূড়ান্ত টানাপোড়েন দেখেছে প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তার স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে। তাদের বাদ দিয়েও রয়েছেন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার স্ত্রী তৃণমূল নেত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং রত্না চট্টোপাধ্যায়

১৬ নভেম্বর, ২০১৭। স্ত্রী রত্নার বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই খবরে তোলপাড় হয়ে যায় বঙ্গ রাজনৈতিক মহল। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোনোর মত একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে আসে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তার সবচেয়ে বড় ইস্যু হলো বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্তর্ভুক্তি। একই সঙ্গে নারদা মামলার জেরে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যায় শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে। যেহেতু শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁকে তাকে এনে মন্তব্য করা হচ্ছিল সেহেতু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের সামনে ‘আসল’ ব্যাপারটি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি স্পষ্ট দাবি করেন, মূলত নারদা মামলার জন্য শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ে। শোভন নাকি একাধিকবার দাবি করতেন, রত্নার জন্যই তাঁর বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, রত্নার লোভের জন্যই তাঁর নাকি এই অবস্থা! যদিও নারদা মামলার আগেওশোভন এবং রত্নার পারিবারিক সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না বলেই দাবি করেছিলেন বৈশাখী। তিনি জানিয়েছিলেন, একাধিকবার দুজনের মধ্যে প্রবল ঝগড়া হত এবং গন্ডগোল বাঁধত। রত্না-শোভন-বৈশাখী, এই তিনজনকে ঘিরে যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি বাংলায় তৈরি হয়েছিল তার সাক্ষী প্রায় গোটা পশ্চিমবঙ্গ। সবশেষে দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক কারণেই পারিবারিক সম্পর্কের ইতি টেনেছেন শোভন এবং রত্না। বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখন শোভন চট্টোপাধ্যায় চলে এসেছেন বিজেপিতে, অন্যদিকে রত্না চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য হিসেবেই কাজ করছেন। যদিও সাম্প্রতিক কালে তাঁর অপসারণ নিয়ে খবর ছড়িয়ে যায় সংবাদমাধ্যমে। যদিও সেই ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সরকারিভাবে কিছু বলা হয়নি।

জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়

‘রাজনৈতিক কারণ’ আরো এক দম্পতির বিচ্ছেদের মূল দোষী। তারা হলেন তৃণমূলের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার স্বামী বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময় দু’জনকেই তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চে দেখা যেত, কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী ভক্ত জয় বন্দোপাধ্যায় যোগ দেন বিজেপিতে। তার পরেও বেশ কিছু দিন একসঙ্গে থাকলেও সবশেষে আর একসঙ্গে থাকা হয়নি অনন্যা এবং জয়ের। যতদিন এগিয়েছে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। প্রথমদিকে অনন্যা দাবি করতেন পারিবারিক সমস্যা, কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে সকলের সামনে চলে এসেছিলো তাদের রাজনৈতিক কারণে দ্বিধা। এরপর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে, এখন রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে স্ত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে ছাড়েন না জয়। অবশ্য পাল্টা দিতে ছাড়েন না অনন্যা নিজেও। এ মনু দিন গেছে যখন জয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরোক্ষে অনন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ‘ল্যাম্পপোস্ট’। আদতে তিনি বলতে চেয়েছেন, তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া সবাই ল্যাম্পপোস্ট, নেত্রী হিসেবে কাউকে সম্মান দিতে গেলে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরোক্ষে তিনি তাকে আক্রমণ করেছিলেন তা কারোর বোঝার বাকি ছিল না। এদিকে অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বামী জয়ের উদ্দেশ্যে মুখ খুলে বলেছিলেন ‘ঘর শত্রু বিভীষণ’। অতএব বোঝাই যাচ্ছে রাজনৈতিক মতভেদ থেকে কিভাবে এক দম্পতির ভেদাভেদ হয়ে গেছে। 

সৌমিত্র খাঁ এবং সুজাতা খাঁ

শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পরে হয়তো এটাই সবচেয়ে বড় দলবদলের খবর হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন সৌমিত্র খাঁ। বর্তমানে তিনি বিষ্ণুপুরের গেরুয়া সাংসদ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি সেখানে প্রচার করতে পারেননি তবে তার স্ত্রী সুজাতা খাঁ নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে স্বামীর হয়ে প্রচার করেছিলেন সব জায়গায়। কার্যত বলা যেতে পারে, বিজেপির এক একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে উঠেছিলেন সুজাতা। মমতা বন্দোপাধ্যায় সহ তৃণমূল কংগ্রেসকে বহুভাবে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু আজ সেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন সুজাতা খাঁ। স্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন স্বামী সৌমিত্র। সাংবাদিক বৈঠক করে সুজাতাকে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে ফের একবার রাজনৈতিক কারণে বিবাহবিচ্ছেদ তথা সম্পর্ক ভাঙার ছবি ফুটে উঠল বাংলার রাজনৈতিক মহলে। যদিও অনেকের বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতভেদ থাকার কারণে যেন ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষতি না হয় সেই দিকে নজর রাখা উচিত। কিন্তু এঁনাদের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি আরও জটিল তা হলফ করে বলা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *