শিলিগুড়ি: মাস খানেক আগে করোনার দাওয়াই বাতলেছিলেন যোগগুরু বাবা রামদেব৷ তাঁর প্রেসক্রিপশনে বলা হয়েছিল, এক ফোঁটা সরষের তেলেই নাকি কাবু হবে করোনা৷ সেই নিয়ে কম বিতর্কও হয়নি৷ এবার খাস বাংলার বুকে শুরু হল সেই ‘তেল-কাণ্ড’৷ শহরের বাসিন্দাদের উদ্দেশে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের দাওয়াই, ‘‘নাকে এক ফোঁটা সরষের তেল ঢালুন, করোনা মুক্ত হলেই আমাদের জানান!’’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাধতেই সুর পাল্টান পুলিশ কর্তারা৷ অন্যদিকে, খবর চাউর হতেই চিকিৎসকদের মাথায় হাত৷ উত্তরবঙ্গে সরকারি করোনা চিকিৎসাকেন্দ্রগুলির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ডা. সুশান্ত রায় বলেন, সরষের তেল নাকে-কানে ঢেলে করোনা প্রতিরোধের কোনও বিজ্ঞান সম্মত যুক্তি নেই৷ অবিলম্বে এই প্রচার বন্ধ করার জন্য দার্জিলিং জেলাশাসককে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি৷
গত ২২ জুন সাধারণ মানুষকে এহেন পরামর্শ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিল শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট৷ যদিও ওই পোস্টে স্পষ্ট উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিল যে, এটি কোনও ‘মেডিক্যাল অ্যাডভাইস’ নয়৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও শহরজুড়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে৷ করোনা সামলাতে সারা দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক পোস্ট মানুষকে বিভ্রান্ত করবে বলেই দাবি তোলা হয়৷
কিন্তু শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এই পোস্টকে কেন্দ্র করে এই বিতর্কের ঝড় ওঠার আগেই চাকা বহুদূর গড়িয়ে গিয়েছে৷ শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অধিকাংশ কর্মীই চোখ-কান বুজে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে শুরু করেছেন এই নির্দেশ৷ সকালে উঠে নাকে-কানে সরষের তেল দিতে শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা৷ এমনকী মুড়ি মাখার মধ্যেও ঢালছেন একগাদা তেল৷ এখানেই শেষ নয়৷ তাঁরা দুধে মেশাচ্ছেন হলুদের গুড়ো৷ রাস্তার পাশে ক্যাম্প করে মাস্কের সঙ্গে বিলি করা হচ্ছে সরষের তেল৷
রাস্তায় ট্রাফিক কর্মীদের দেখলে হাসি চেপে রাখা যায় না৷ তাঁদের নাক-কান দিয়ে তেল চুইয়ে পড়ছে৷ কানের লতি তেলে ভিজে জবজবে৷ পথচারীদের চোখ পড়লেই লজ্জা পেয়ে মাস্ক টেনে নাক লুকোচ্ছেন তাঁরা৷
এই সরষের তেল মেখেই নাকি অনেকে সুস্থ হয়েছেন৷ সেই তালিকাও নিজেদের পোস্টে শেয়ার করেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট৷ এই তালিকায় রয়েছেন আইপিএস ডেভিড লেপচা, নিমা নরবু ভুটিয়া, কনস্টেবল সুদেশ তামাং ও তাঁর স্ত্রী সহ আরও অনেকের নাম৷ চিকিৎসকদের একাংশের মতে, শিলিগুড়িতে যে হারে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে সেই উদ্বেগ থেকেই এহেন পোস্ট করেছে পুলিশ কমিশনারেট৷ চিকিৎসকদের পরে বিশাল দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে পুলিশকেই৷ তবে করোনা সংক্রমণ রুখতে নাকে সরষের তেল টানার এই নিদান সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবে বলেই আশঙ্কা করছে চিকিৎসক মহল৷