কলকাতা: প্রায় মাসচারেক আগের কথা৷ পদ্ম-ব্রিগেডকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে সেদিন প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, বিজেপি যদি বাংলার ভোটে তিন অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছয়, তা হলে তিনি তাঁর পেশাই ছেড়ে দেবেন৷ রাজনীতিতে এমন চ্যালেঞ্জকে আক্ষরিক অর্থে ধরতে নেই সেটা ঠিক, তার পরও পিকের এহেন আস্ফালনে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে৷ ২০০ আসনের স্বপ্ন দেখানো বিজেপি এহেন চ্যালেঞ্জকে হাসি-মশকরায় তো উড়িয়ে দিয়েছিলই, আম-আদমিও ভেবেছিলেন, পিকে প্রলাপ বকছেন না তো! প্রায় মাঝপথে পৌঁছে যাওয়া নবান্ন দখলের যুদ্ধের ফলাফল বলছে, নেহাত হাওয়ায় ভর করে সেদিন চ্যালেঞ্জটা ছোড়েননি এই পেশাদার ভোটকুশলী৷
বেলা সাড়ে বারোটার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তৃণমূল এগিয়ে ২০৮ আসনে৷ আর বিজেপি এগিয়ে ৮০ আসনে৷ একথা অনস্বীকার্য, তৃণমূলের এই বিপুল জয়ের নেপথ্যে যতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যারিশ্মা থাক না, পিকের অঙ্কের অবদান নেহাত কম নয়৷ মমতা-অভিষেকরা যেদিন পিকের আইপ্যাকের হাতে ভোট বৈতরণি পার করার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন, সেদিন নাক কুঁচকেছিলেন অনেকেই৷ মমতার মতো অভিজ্ঞ মাটির রাজনীতিক কেন পেশাদারি সংস্থার ওপর ভরসা করছেন, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়ে৷ বিজেপি তো বটেই, অনেক সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা ছিল, তা হলে কি নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছেন মমতা? সরকারের উন্নয়নী কর্মসূচির ফসল ঘরে উঠবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমোরও?
তার পর জল গড়িয়েছে অনেকটাই৷ অনেকেই যেমন পিকের সংস্থার পেশাদারি ভূমিকাকে ঢাল করে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যেমন নাম লিখিয়েছেন, তেমনই তৃণমূলের অন্দরেও শোনা গিয়েছে বেসুরো গলা৷ কিন্তু তার পরেও পিকের ওপর আস্থা হারায়নি তৃণমূল নেতৃত্ব৷ প্রচারের কৌশল নির্ধারণ থেকে প্রার্থী বাছাই- সব কিছুই হয়েছে পিকের মতামতকে মাথায় রেখে৷ আর তাই ফলাফলও বলছে, সেই আস্থার সম্পূর্ণ মর্যাদা দিলেন পিকে৷ আরও একবার বোঝালেন, রাজনীতি শুধু আবেগের নয়, অঙ্কেরও৷ অতএব, সিকান্দার পিকে, বিজেপি ফিকে৷