RG Kar: এক মাসে যা করল সিবিআই! শুধু আন্দোলন প্রতিবাদের বিস্তার?

কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডের এক মাস পার,শুধুই আন্দোলনের বিস্তার, প্রতিবাদের ঝড়। কিন্তু তদন্ত এগোলো কতদূর? খুন ধর্ষণের ঘটনায় ঠিক কী করলো সিবিআই?দেখতে দেখতে আজ ৯…

Picsart 24 09 04 23 37 00 982

কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডের এক মাস পার,শুধুই আন্দোলনের বিস্তার, প্রতিবাদের ঝড়। কিন্তু তদন্ত এগোলো কতদূর? খুন ধর্ষণের ঘটনায় ঠিক কী করলো সিবিআই?দেখতে দেখতে আজ ৯ সেপ্টেম্বর। আজ থেকে একমাস একদিন আগে, আর জি কর হাসপাতালে অন ডিউটি একজন মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ খুনের ঘটনা, গোটা বাংলা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। শিউরে ওঠা এই ঘটনার আঁচ ছড়িয়েছিল বিদেশেও। সব মহল থেকে একটাই প্রশ্ন উঠেছিল, কী ভাবে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক তাঁর কাজের জায়গায় খুন-ধর্ষণের শিকার হতে পারেন? সুবিচারের দাবিতে আগুন জ্বলেছে চারিদিকে। পুলিশের থেকে টেস্ট টেক ওভার করেছে সিবিআই। হাইকোর্ট থেকে কেস গেছে সুপ্রিমকোর্টে। কিন্তু তারপর? আখেড়ে লাভ কি কিছু হয়েছে?

যদি ঘটনা শুরুর দিন থেকে দেখা হয় তাহলে দেহ উদ্ধারের দিন রাতেই সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু সে একা জড়িত, এটা মানতেই চায়নি চিকিৎসক মহল। শুরু হয় আন্দোলন। সঙ্গে ছিল একগুচ্ছ দাবি-দাওয়া। দেহ উদ্ধারের পাঁচ দিনের মাথায়, মানে ১৩ অগস্ট তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। লম্বা ছুটিতে পাঠানো হয় আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। কিন্তু তত দিনে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের আঁচ বহু দূর ছড়িয়েছে। তাতে শামিল হয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে আরজি করে বহিরাগতদের তাণ্ডব বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয় কলকাতা পুলিশকে। কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসকরা তাদের কর্মসূচিতে প্রথম থেকেই রাজনীতির রং লাগাতে চাননি বলে, আন্দোলনকে জোরদার করতে রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গীদের নিয়ে একসময় গঠন করেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’। সমস্ত দোষীকে চিহ্নিত করে ন্যায্য বিচার, কলকাতার নগরপালের পদত্যাগ, সহ কয়েকটা দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন-কর্মবিরতি আজও চলছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ কোনও কাজে আসেনি। উল্টে লালবাজার অভিযান করে, তাতে বাধা পেয়ে রাস্তায় বসে, পুলিশ কমিশনার বিনীত কোয়েলের সঙ্গে দেখা করে, নিজেদের দাবি জানিয়ে এসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কলকাতা পুলিশ এই খুন ধর্ষণের ঘটনায় সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতারের পর থেকে তদন্তে আর কোন অগ্রগতি চোখে পড়েছে কি? বরং এই এক মাসে খুন ধর্ষণ থেকে, ঘটনার ট্র্যাক অনেক দিকে ঘুরেছে। হাসপাতালের বিরুদ্ধে রোগী ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। বিনা চিকিৎসায় একের পর এক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও রাজ্য সরকার জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করে গেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দোষীদের কঠিনতম শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছে চিকিৎসক সংগঠন, রাজনৈতিক শিবির। চলছে সমাবেশ-মিছিল, রাত দখল, ভোর দখল। এমনকি নবান্ন অভিযান ও হয়ে গেছে। যদিও তাতে সফল হতে পারেননি আন্দোলনকারীরা। ছাত্র সমাজের সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক মদদ এর ইঙ্গিত একেবারে স্পষ্ট ছিল। অরাজনৈতিক কর্মসূচি বলেও, অনেক রাজনৈতিক প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু এই যে এতো আন্দোলন, এতো প্রতিবাদ। আলটিমেটলি এগুলোর ফল কি? সিবিআই এর কাছেও তো জাস্টিস চাইছে মানুষ। কিন্তু পাচ্ছে কি? সিবিআই এর‌ কাছে কেস ডায়েরি যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনা কিনারার জন্য কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই এর কাছে কেস হ্যান্ড ওভার করা হয়। কিন্তু সেই থেকে এখনো পর্যন্ত ১৫ দিন, ১০০ জনের বয়ান রেকর্ড এবং ১০ জনের পলিগ্রাফ টেস্ট করে সিবিআই চিকিৎসককে খুন ধর্ষণের ঘটনায় সম্ভবত গণধর্ষণের অভিযোগ খারিজ করতে চলেছে। যা যা তথ্য প্রমান এখনো পর্যন্ত সিবিআইয়ের হাতে এসেছে তাতে গণধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলেই সিবিআই সূত্রের খবর। কিন্তু, এটা প্রমাণের জন্য এতগুলো দিন সময় লেগে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার?
তাহলে এই ঘটনার কিনারা এরপর কিভাবে হতে পারে? যদি সঞ্জয় একাই দোষী হয় তাহলে তাকে অলরেডি গ্রেফতার করা হয়েছে। কেস চলবে, সাজা ঘোষণা বাকি। সেটা দীর্ঘ মেয়াদী প্রসেস। সে ক্ষেত্রে তদন্তের গতি নিয়ে তোলা প্রশ্ন এখানেই থিতিয়ে যায়। আর জাস্টিসের দাবিও কোথাও যেন হালকা হয়ে যায়।

তার পরেও যখন আন্দোলন প্রতিবাদ রাত দখল ভোর দখল এমনকি দিন দখলের কথা উঠছে। তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন, এটা গণধর্ষণের ঘটনা নয় ১৭ ই সেপ্টেম্বর সিবিআই এর জমা দেওয়া স্ট্যাটাস রিপোর্টের পর যদি তাতে সিলমোহর ও পরে, তাতেও প্রতিবাদ আন্দোলন কতটা কমবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে জাস্টিসের দাবিকে সামনে রেখে জমায়েত করতে হবে বলে করছে কিছু মানুষ, এমনটা নয় তো?