বালুরঘাট: উড়ো ফোনে জেরবার সরকারের হেল্পলাইন!
করোনা পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হতেই সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। উদ্দেশ্য ছিল করোনা পরিস্থিতিতে সংকটে পড়া জেলার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানো। সেই উদ্দেশ্যে তারা সত্যিই সফল৷ তবে শুধু জরুরি ফোন আসছে তা নয়, একাধিক মানুষের নানা অযাচিত আবদারে দিশেহারা তাঁরা৷ হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেই চলছে প্রেম নিবেদনের পর্ব! ফোন করে প্রিয়জনের কাছে কারোও আবার আর্জি, ‘‘ফিরিয়ে দাও তোমার হাত৷’’
প্রশাসনের এক কার্তা বলেন, লকডাউনে বহু মানুষ নানাবিধ সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন৷ কিন্তু একদল মানুষ এই সময় রসিকতা করে বেরাচ্ছেন৷ করোনার হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে কেউ বাচ্চার কান্নার শব্দ শোনাচ্ছেন, তো কেউ আবার প্রেম নিবেদন করছেন৷ কারও আবদার ভেঙে যাওয়া প্রেমের সম্পর্ক জুড়ে দিতে হবে৷ শুধু তাই নয়, বাড়ি ভাড়া খুঁজে দেওয়ার মতো বায়না নিয়েও হাজির হয়েছেন অনেকে৷ কেউ কেউ আবার বাড়িতে রাত্রি পাহারার ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছেন৷ পারিবারিক হিংসার ঝড়ও আছড়ে পড়েছে হেল্পলাইন নম্বরে৷ স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া অশান্তি মিটিয়ে দেওয়ার দাবিও এসেছে একাধিকবার৷
এখানেই কিন্তু আবদারের শেষ নয়৷ কেউ বলছেন, ঠিকমতো বাজার করতে পারছি না। এমন কিছু রেসিপি বলুন যাতে মুখে রুচি আসে! কেউ আবার বলছেন, বাজার করতে যেতে পারছি না, আপনারা ঘরে খাবার পাঠিয়ে দিন। এমন কি মাদকাসক্তরা ফোন করে বলছেন, দাদা বলতে পারবেন কবে মদের দোকান খুলবে? করোনা পরিস্থিতিতে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাজুড়ে যে সমস্ত হেল্পলাইন খোলা হয়েছে সেগুলিতে এমন উড়ো ফোন আসতে থাকায় আধিকারিকদের মাথায় হাত পড়েছে। উড়োফোনের দাপটে তাঁরা নাজেহাল৷ ফোন ধরে এহেন আবদার শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে পড়ছেন প্রশাসনিক কর্তারা৷ তাসত্ত্বেও ঠান্ডা মাথায় গোটা বিষয়টি সামলাতে হচ্ছে তাঁদের।
যদিও এই সকল হেল্পলাইনে অধিকাংশ ফোনই আসছে প্রয়োজনের। ইতিমধ্যে জেলার প্রায় কয়েক হাজার বাসিন্দা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করেছেন৷ ভিনরাজ্যে আটকে পড়া মানুষরা খেতে না পেয়ে জেলা প্রশাসনের হেল্পলাইনে ফোন করে আবেদন জানিয়েছেন৷ তড়িঘড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে সেই সকল এলাকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। উপকৃত হয়েছেন তাঁরা৷ অথচ এই সংকটের সময়ে দ্বায়িত্বজ্ঞানহীতার পরিচয় দিচ্ছে এক শ্রেণীর মানুষ৷ উড়ো ফোন করে প্রশাসনের কাজের সময় নষ্ট করছেন তাঁরা৷
যাঁরা সত্যিই সমস্যায় পড়ে এই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন৷ সরকারি কর্মী-আধিকারিকরা তথ্য যাচাই করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রশাসনিক টিম পাঠিয়ে ব্যবস্থা করছেন৷ তবে প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে উড়ো ফোন৷ আপাতত এই উড়ো কলগুলি নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ প্রশাসন৷ বরং প্রকৃত সমস্যা নিয়ে যে ফোনগুলি হেল্পনাইন নম্বরে আসছে, সেগুলি লিপিবদ্ধ করে দ্রুত পদক্ষেপ করছেন প্রশাসনিক কর্তারা৷