নিজস্ব প্রতিনিধি: একটু আগেই তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মৃতদেহ অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার টাকা নেই। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকের দাবি মতো তিন হাজার টাকা দিতে না পারায় মায়ের দেহ কাঁধে তুলে নিলেন ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ান। সঙ্গী হলেন বৃদ্ধ পিতা জয়কৃষ্ণ দেওয়ান। জলপাইগুড়ির এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত গোটা বাংলা। কয়েক বছর আগে এমনই ঘটনা ঘটেছিল ওড়িশার কালাহান্ডি এবং ছত্তিশগড়ে। এবার এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল পশ্চিমবঙ্গ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে যে সময় ঘটনাটি ঘটল তখন বাংলার চতুর্দিক থেকে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে। কখনও ইডি বা সিবিআই, কখনও সিআইডি বা পুলিশের হানায় কলকাতা থেকে জেলা জুড়ে টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটতে দেখছে রাজ্যবাসী। ঠিক তার বিপরীত ছবিটাও দেখলেন সবাই। আসলে একশ্রেণির মানুষের হাতে এত বিপুল টাকা রয়েছে সেখানে তার উল্টোদিকের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে শুধুই অভাব আর অনটন। ওঁরা সবাই যেন নেই রাজ্যের বাসিন্দা।
বস্তুত ২০২২ সালটা পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে টাকা উদ্ধারের বছর হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে, আবার গার্ডেনরিচে গেমিং অ্যাপ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকেও উদ্ধার কয়েক কোটি টাকা। মালদার মাছ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকেও উদ্ধার লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়া গরু পাচার কাণ্ডে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হতেই দেখা গেল তাঁর মেয়ে, আত্মীয়দের পাশাপাশি ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রচুর বেনামি সম্পত্তি থাকারও অভিযোগ ওঠে। সদ্য মোমিনপুর হিংসা মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে এনআইএ আধিকারিকরা বেশ কয়েক লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছেন।
এমনকী খড়দহের এক শিক্ষকের বাড়ি থেকেও বেশ কয়েক লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। অর্থাৎ টাকা উদ্ধারের ঘটনার তালিকা যেন শেষ হওয়ার নয়। আর এর বিপরীত ছবিটা বলছে বাড়িতে অসুস্থের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন বহু মানুষ। কত মানুষ চাকরি হারিয়ে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সেটা শুধু তাঁরাই জানেন। এমনকী চাকরি হারিয়ে একাধিক রাজ্যবাসী আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। সেখানে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা পাচার, গরু পাচার কাণ্ডে কোটি কোটি টাকা হাত বদল হয়েছে।
বিভিন্ন সময় সাম্যবাদের মতো গালভরা বহু আলোচনা সভা প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্য তথা দেশ। তাতে সমাজ তথা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির কোনও বদল হয়নি। তাই আজকের সমাজে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এবং রামপ্রসাদ দেওয়ানের মতো দুই শ্রেণির মানুষের সহাবস্থান আকছার দেখা যাচ্ছে। ছবিটা অদূর ভবিষ্যতে যে বদলে যাবে তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাই কোটি কোটি টাকা আর বিপুল সম্পদের নিচে চাপা পড়ে থাকবে নেই রাজ্যের বাসিন্দাদের মানসিক যন্ত্রণা আর হাহাকার।