কলকাতা: করোনার কালো ছায়া ঘিরে ধরেছে সারা বিশ্বকে৷ বাঁচার একমাত্র পথ লকডাউন৷ ভারতও এই পথে সামিল৷ যার জেরে প্রায় দেড় মাস হতে চলল বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজের পঠনপাঠন৷ লকডাউনে অনেকটাই বদলে গিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের জীবন৷ আগে গোটা দিনটাই থাকত গতানুগতিক রুটিনে বাধা৷ এখন স্কুল বা টিউশন যাওয়া নেই৷ নেই বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে ছোটাছুটির পালা৷ জীবন এখন ঘরের চারদেওয়ালে বন্দি৷ তবে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শুরু হয়েছে অনলাইন পড়াশোনা৷
লকডাউনের মধ্যেও সিলেবাস শেষ করতে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই অন-লাইনে পড়াশোনা চালাচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত নিল দক্ষিণ কলকাতার পাঠভবন হাইস্কুল। সিলেবাস শেষ করার থেকেও জীবনের মূল্যবোধ শেখানোই এখন জরুরি বলে মনে করছেন পাঠভবনের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শুভা গুপ্ত। প্রতিযোগিতা নয়, বরং জোর দেওয়া হচ্ছে সৃজনশীল প্রতিভার দিকেই। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিকে৷
একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, অনলাইন পড়াশোনার জন্য অত্যাবশ্যকীয় ইন্টারনেট পরিষেবা নেই একাধিক ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে৷ অনেকের অবস্থাই তেমন সচ্ছল নয়। তাহলে তারা কি পড়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে? এই চিন্তা থেকেই অনলাইনের রাস্তা থেকে সরে এল পাঠভবন। বদলে যে জিনিসটা নিয়ে এল, সেটা এক কথায় অভূতপূর্ব। অন্যদিকে, মনোবিদরা বলছেন অনলাইনে ক্লাস করলেও, বাড়ির বাইরে না বেরোতে পারা বা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় শিশুমনে অবসাদ তৈরি হতে পারে। সে কথা ভেবেই এপ্রিল মাসের শেষের দিকে নিজের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চিঠি পাঠিয়ে মনোবল চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেন শুভ্রা গুপ্ত।
ওই চিঠিতে তিনি বলেন, দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে এতদিন যা লক্ষ করা হত না, সেই সকল জিনিসগুলি লক্ষ করার সময় এসেছে৷ ঘরের জানালা দিয়ে গাছ কিংবা রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট দেখা। একই ঘরে বাস করা টিকটিকিদের বেঁচে থাকা। প্রতি দিন নিজের অভিজ্ঞতার ডায়েরি লেখা যাতে পারে। তিনি লিখেছেন, ‘‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সময় আগেও এসেছে। তোমাদের কাছ থেকে অনেক সৃজনশীল উপহার পাব।’’
তিনি বলেন, করোনার এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তগুলোয় পৃথিবী আমাদের কী দেখাচ্ছে, আমাদের আশেপাশের পরিবেশ, ঘটনা আমাদের কী শেখাচ্ছে, সেটা জানাও শিক্ষারই অঙ্গ। ইতিহাসকে চিনতে হবে, বর্তমানকে বুঝতে হবে৷ তৈরি করতে হবে সময়ের ডকুমেন্টেশন। কবিতা, গল্প, ছবি আঁকা কিংবা মোবাইলে ছবি তোলা যেতে পারে৷ ছোট্ট একটা বিষয় মাথায় রেখে বানানো যেতে পারে সিনেমা৷ যে যেমন পারবে, তেমন ভাবেই নিজের চারিপাশকে ব্যক্ত কর৷ স্কুল খোলার পর এই সব কাজগুলি দেখে বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লকডাউনে এটাই হবে পাঠভবনের পড়ুয়াদের ‘হোম টাস্ক’। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে বেরিয়ে ছেলেমেয়ারা যাতে নিজেদের মেলে ধরতে পারে, সেই জন্যই এই উদ্যোগ। ছোটদের জন্য অনলাইন পড়াশোনার বন্দোবস্ত না থাকলেও, দশম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে কিছু অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছে। স্কুলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক এবং বিশিষ্টজনেরা৷