জেলে বসে রামকৃষ্ণ শরণে পার্থ, পড়তে চাইলেন ‘টাকা মাটি মাটি টাকা’, চেয়েছেন খাতা আর কলম

জেলে বসে রামকৃষ্ণ শরণে পার্থ, পড়তে চাইলেন ‘টাকা মাটি মাটি টাকা’, চেয়েছেন খাতা আর কলম

কলকাতা: ‘টাকা মাটি, মাটি টাকা’৷ এ কথা বলে গিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস৷ এই বাণীতে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন অর্থই জীবনের মূল সম্পদ নয়৷ কিছুটা হলেও হয়তো সে কথা অনুধাবন করতে পারছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তাই হয়তো প্রেসিডেন্সির ‘পহেয়া বাইশ’ ওয়ার্ডের ২ নম্বর সেলে বসে  রামকৃষ্ণের বাণী পড়েই দিন কাটাতে চাইছেন এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রাক্তন মন্ত্রী৷

আরও পড়ুন- ৪০০-র কম সংক্রমণ, মৃত্যু নিয়ে চিন্তায় বঙ্গবাসী

এখন তিনি কারাগারের চার দেওয়ালে বন্দি।  সেই আঁধারে আলোর খোঁজে রামকৃষ্ণেই ভরসা৷ জেলের মধ্যে খাওয়া আর ঘুম ছাড়া বিশেষ কোনও কাজই নেই তাঁর। মাঝে মধ্যে শুধু জেরা করতে আসছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷  আধিকারিকদের প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। বাকি সময়টুকু রামকৃষ্ণের বই পড়েই ‘আধ্যাত্মচেতনা’ বাড়াতে চাইছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। জেল কর্তৃপক্ষকে বলে আনিয়ে নিয়েছেন ‘শ্রীম কথিত শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’। সূত্রের খবর, রামকৃষ্ণ শরণে গিয়ে অমৃতের সন্ধানের পাশাপাশি জেল কুঠুরিতে বসে সাহিত্যেও ডুব দিতে চাইছেন প্রথমে অর্থনীতি ও পরে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ছাত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করতেই জেলে পার্থের জন্য পাঠানো হয়েছে ‘মহাশ্বেতা দেবী অমনিবাস’, ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘স্তন্যদায়িনী’, ‘অরণ্যের অধিকার’-এর মতো বইগুলো৷ মহাশ্বেতার কলমে লেখা লোধা, শবরদের কথাও পড়বেন তিনি। পার্থ নিজের সেই ইচ্ছা প্রকাশ করতেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁকে বই দেওয়া হয়েছে। তবে সেই বইগুলি পার্থ হাতে পেয়ে গিয়েছেন কি না তা অবশ্য জানা যায়নি। বইয়ের পাশাপাশি আবদার করে আনিয়েছেন খাতা, কলমও৷ সেগুলির ব্যবহার শুরু করেছেন কি না, তাও জানা যায়নি! কিন্তু কী লিখবেন সেখানে? জেলের আঁধারে বদলে যাওয়া জীবনের অধ্যায়? না কি সাজিয়ে রাখবেন ফেলে আসা দিনের স্মৃতি! সে কথা জানেন শুধু পার্থই৷

জেলের অসহায় সময়ে পার্থ রামকৃষ্ণ শরণে গেলে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ তাঁর ছেলেবেলার দিনগুলি এমন এক পরিবেশে কেটেছে যেখানে কথামৃতের চর্চা ছিল স্বাভাবিক। তিনি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী৷ পরে পেশা হিসাবে যোগ দেন বেসরকারি সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মী হিসাবে। তবে লেখাপড়ার প্রতি তাঁর টান বরাবরের৷ ঘনিষ্ঠেরা বলেন, পড়ার প্রতি যেমন ঝোঁক রয়েছে তাঁর, তেমনই নিজস্ব বইয়ের সংগ্রহও বেশ ভাল। তিনি ছিলেন তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’-র সম্পাদক৷ 

গত শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেয় ইডির বিশেষ আদালত। তার পর থেকে তাঁর ঠাঁই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের এক নম্বর ব্লকের দু’নম্বর সেল। যেখানে রয়েছে ছোট একটা ফ্যান আর চারটে কম্বল৷ পরে অবশ্য একটা খাট পেয়েছেন তিনি। সেই খাটেই তাঁর পাশে জায়গা করে নেবে পছন্দের বই। থাকবে খাতা, কলম৷