কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এক বছর আগেই গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শত চেষ্টাতেও জামিন পাননি তিনি। এই অবস্থায় জামিন পেতে মরিয়া হয়ে উঠলেন তিনি। সেই সূত্রে আদালতের শুনানিতে হাজির থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলতেও দ্বিধা করলেন না। যে বিষয়টি নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে তিনি একেবারেই যুক্ত নন, এই দাবি বহুবার করেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার ফের সেই দাবির পক্ষে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়ালেন তিনি। যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিন আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে মামলার শুনানির সময় পার্থের আইনজীবী স্কুল সার্ভিস কমিশনের কার্যপদ্ধতির কথা তুলে ধরেন। আর সেখানেই উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে গিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কার্যপদ্ধতি আইনজীবীর মাধ্যমে তুলে ধরতে গিয়ে সেখানে কেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুললেন, তা নিয়ে পার্থের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠছে। এদিন শুনানিতে ঠিক কি বলেছেন পার্থের আইনজীবী?
আইনজীবীর দাবি, ১৯৯৭ সালের পর থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশন আইনে বেশ কয়েকটি সংশোধন হয়েছে, যা শিক্ষা দফতর করেনি, করেছে রাজ্য সরকার। কমিশনের কাজকর্মে মন্ত্রীদের কোনও ভূমিকা নেই। এসএসসি নিজস্ব নীতিতেই চলে। সেই সূত্রে আইনজীবীর দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়োগকর্তা বা সুপারিশ কর্তা ছিলেন না। নিয়ম নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে রিপোর্ট দেন। তাঁরা সেই বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট করেন মুখ্য সচিবের কাছে। এরপর মুখ্য সচিব সেই রিপোর্ট দেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
এভাবেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দোষ প্রমাণিত করতে চেয়ে এসএসসি’র কার্যপদ্ধতি তুলে ধরতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ যেভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী তুলেছেন, তা নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও পরে আদালত থেকে বেরিয়ে পার্থকে বলতে শোনা গিয়েছে, “দোহাই, আপনারা বিকৃতভাবে কখনও সংবাদ পরিবেশন করবেন না। মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ কর্তা নন, সুপারিশ কর্তাও নন। ইংরেজিতে আমি পলিসি মেকিং বলেছি। যারা বোঝেন ইংরেজি, তাঁরা বুঝেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য আমার অপরিসীম ছিল, রয়েছে, আগামী দিনেও থাকবে।”
কিন্তু আদালতের বাইরে পার্থ এমন দাবি করলেও তাতে বিতর্ক থেমে থাকছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, এদিন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে গিয়ে সচেতন ভাবেই কি মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলেছেন পার্থ? কোনও বিষয়ই মুখ্যমন্ত্রীর নজর এড়ানোর কথা নয়, পার্থ কার্যত সেটাই ঘুরিয়ে বলতে চেয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে। কিন্তু এই দাবি এতদিন পরে কেন করলেন তিনি, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে কি তিনি সুকৌশলে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলকে এভাবে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইলেন? আবার অন্য মতও রয়েছে। জামিন পেতে এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি, এভাবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলে নিস্তার পেতে চাইছেন পার্থ, এমন ব্যাখ্যাও উঠে আসছে ওয়াকিবহাল মহল থেকে। তাহলে আসল কারণ কি? মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে তৃণমূল সরকারকে এই ইস্যুতে বিপাকে ফেলতে চাইছেন তিনি? সত্যিই অঙ্কটা বেশ কঠিন! যথারীতি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর এহেন ভূমিকায় বিস্তর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।