অসুস্থ স্বামীর দেখভাল, পরিচারিকার কাজ করেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই পঞ্চায়েত প্রধান

অসুস্থ স্বামীর দেখভাল, পরিচারিকার কাজ করেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই পঞ্চায়েত প্রধান

কলকাতা: তিনি পঞ্চায়েতের প্রধান৷ পেশায় পরিচারিকা৷ তাঁর কাঁধে রয়েছে আরও অনেক দায়িত্ব৷ অসুস্থ স্বামীর পরিচর্চা থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ একার হাতেই সামলান৷ সেই সঙ্গে চলছে তাঁর উচ্চমাধ্যমিকের প্রস্তুতি৷ হ্যাঁ, তৃণমূলের দু’বার নির্বাচিত সদস্য পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বিজুর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান ধর্ণা রায় এভাবেই নিজের জীবন কাটান৷ তাঁর সততার কথা স্বীকার করেন  বিরোধীরাও৷   

আরও পড়ুন- কয়লা-কাণ্ডে CBI-এর প্রধান তদন্তকারীর বিরুদ্ধেই FIR, জিজ্ঞাসাবাদের নামে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ

বছর ৪৫-এর ঝর্ণার রোজনামচা অনেককেই হতবাক করে৷ ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে সেরে ফেলেন ঘরের কাজ৷ তারপর পাশের বাড়িতে যান পরিচারিকার কাজ করতে৷ ফিরে এসে স্বামীর সেবা যত্ন করে ফের রওনা দেন পঞ্চায়েতের উদ্দেশে৷ বিকেল পাঁচটায় বাড়ি ফিরে চলে যান আরও একটি বাড়ির কাজে৷ অ্যাসবেস্টসের ছাউনির বাড়িতে বসেই ঝর্না জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। দুই কন্যা সন্তানের মা তিনি৷ দুই মেয়েরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামী নীলু রায় বেশ কয়েক বছর ধরেই শয্যাশায়ী৷ কিডনি ও  হৃদরোগে আক্রান্ত। মাস গেলে পাঁচ হাজার টাকার শুধু ওষুধ কিনতে হয় তাঁকে। ঝর্ণা বলেন, ‘‘পঞ্চায়ের প্রধান হয়েও লোকের বাড়ি কাজ করি৷ তার জন্য অনেকে অনেক কথাও বলেন। কিন্তু ওই টাকায় আমার পেট ভরবে না, ওষুধের টাকাও জুটবে না। পঞ্চায়েত প্রধানের ভাতায় এত কিছু হয় না। তা ছাড়া, যদি পদ না থাকে, তখন লে কী করব! তাই অন্যের বাড়িতে কাজ ছাড়িনি। মাসে দু’হাজার টাকা আয় হয় সেখান থেকে৷’’

পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে বিভিন্ন সভায় হাজির থাকতে হয় তাঁকে৷ পাশাপাশি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়সাধন, উন্নয়নমূলক কাজ, সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণ করার দায়িত্বও সামলাতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘ গ্রামের রাস্তা মেরামত থেকে নর্দমা গড়া, এলাকায় সাংস্কৃতিক চর্চা, সব দিকেই প্রধানের নজর রয়েছে। জাবুই-মেল্লা গ্রামে তো নাট্যমঞ্চ তৈরি করে দিয়েছেন উনিই। পানীয় জলের ব্যবস্থাও করছেন সেখানে।’’

২০১৮ পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর  মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন ঝর্না রায়। এখন উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ পাশাপাশি বর্ধমানে একটি কেন্দ্র থেকে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন। ঝর্নার কথায়, ‘‘এখন সব কাজই কম্পিউটারে করতে হয়। ভাল করে পঞ্চায়েত চালাতে গেলে, পড়াশোনা জানাটা খুবই দরকার। সেটা বুঝেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই৷ দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছি। এখন উচ্চমাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’ মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল ঝর্ণার প্রশংসা করে বলেন, ‘‘প্রধান হওয়ার পরে নিজের আগ্রহে উনি যে ভাবে পড়াশোনা শুরু করছেন, তা সত্যই প্রশংসনীয়।’’ 

স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্বামীও৷ নীলু বলেন, পঞ্চায়েতের কাজ হোক বা বাড়ি, কোনও কাজে কোনও ফাঁক নেই৷ স্ত্রীকে যত দেখি, অবাক হই৷