মাত্র এক ফোনেই যৌনপল্লি থেকে ক্যানিংয়ের বাড়িতে ফিরল নাবালিকা

ক্যানিং: দিন আনি দিন খাইয়ের পরিবারে কন্যা সন্তান জন্মানো অনেকটা অভিশাপের মতো। মানতে কষ্ট হলেও স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই ছবির কোনও বদল হয়নি। নিদারুণ অর্থকষ্টে ভুগতে থাকা সংসারে মেয়েকে পাত্রস্থ করা তো দূরের ব্যাপার ন্যূনতম লেখাপড়া শেখানোই সম্ভব হয় না। আর সেই পরিবারের বসবাস যদি প্রান্তিক এলাকায় হয় তো কথাই নেই। যেকোনও মুহূর্তে নাবালিকা

মাত্র এক ফোনেই যৌনপল্লি থেকে ক্যানিংয়ের বাড়িতে ফিরল নাবালিকা

ক্যানিং: দিন আনি দিন খাইয়ের পরিবারে কন্যা সন্তান জন্মানো অনেকটা অভিশাপের মতো। মানতে কষ্ট হলেও স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই ছবির কোনও বদল হয়নি। নিদারুণ অর্থকষ্টে ভুগতে থাকা সংসারে মেয়েকে পাত্রস্থ করা তো দূরের ব্যাপার ন্যূনতম লেখাপড়া শেখানোই সম্ভব হয় না। আর সেই পরিবারের বসবাস যদি প্রান্তিক এলাকায় হয় তো কথাই নেই। যেকোনও মুহূর্তে নাবালিকা আড়কাঠিদের হাত ঘুরে দেশের কোন কানাগলিতে পাচার হয়ে যাবে ভাবতেও পারবেন না। নাবালিকা পাচার আজ গোটা পশ্চিমবঙ্গের সমাজব্যবস্থায় বড়মাপের অভিশাপ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার, ক্যানিং, কাকদ্বীপে তো অহরহ ঘটছে। এলাকার দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারগুলিতে খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, বেশিরভাগ বাড়ির নাবালিকা মেয়ে দীর্ঘদিন হল নিখোঁজ হয়েছে। প্রশাসনিক তৎপরতায় তাদের কেউ কখনও বাড়ি ফিরলেও সেই পরিবারের বেঁচে থাকাই ততদিনে দায় হয়ে উঠেছে। তবুও এই প্রান্তিক নাবালিকারা বাড়ি ফেরে ভাগ্যের জোরে। আজ রইল তেমনই একজনের ব্যাথাতুর জীবনবৃত্যান্ত।

সীমা,(নাম পরিবর্তিত) ভ্যানচালক বাবা ও পরিচারিকা মায়ের সংসারে একমাত্র মেয়ে। দুটি ছোট ছোট ভাইও রয়েছে তার। ১৩ মাস আগে বাড়ির অদূরেই অপহৃত হয় সে, চকলেটের সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল সীমাকে। অচেতন হয়ে পড়লে এই ঘটনায় অভিযুক্ত আড়কাঠি রাকেশ মোল্লা তাকে হাওড়া স্টেশনে নিয়েন যায়। তাপর ট্রেনে চাপিয়ে পুণের যৌনপ্ললিতে বিক্রি করে দেওয়া হয় ক্যানিংয়ের এই নাবালিকাকে। ততক্ষণে নিজের অন্ধকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা করতে পেরেছে ওই নাবালিকা। পুতিগন্ধময় পতিতালয়ে কাজ করতে অস্বীকার করে সীমা, এরপর তাকে ৪.৫ লক্ষ টাকায় মহারাষ্টের অন্য এক যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে গিয়েই এক বাঙালি যুবকের সঙ্গে ওই নাবালিকার দেখা। শেষপর্যন্ত ওই যুবকের সহযোগিতায় ফের আলোয় ফেরার সুযোগ পেল সে।

একটা চিরকূটে সীমাকে দেখতে চাইলে এই নম্বরে যোগাযোগ করো। এটুকু লিখে ওই যুবককে তার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল নাবালিকা। তার কথা রেখেছেন যুবক, ডাক বিভাগের সহায়তায় চিঠি পৌঁছে গিয়েছে সীমার বাড়িতে। এর মধ্যে প্রায় ১৪ মাস কেটেছে, কন্যাশ্রীর টাকা কীভাবে পাওয়া যায় তার খোঁজ নিতে বাড়ি থেকে ব্যাংকের উদ্দেশে বেরিয়েছিল সীমা, দিনটা ২০১৭-র নভেম্বর। তারপর মেয়েকে কোথায় না কোথায় খুঁজেছে পুলিশ যখন হাল ছেড়েদিল তখনই হতভাগ্য বাবা বুঝে যান পাড়ার আর পাঁচটা নিখোঁজ মেয়ের তালিকায় তাঁর সীমা নতুন সংযোজন। এরপর মেয়ের ভাগ্যচিন্তা করে হৃদরোগ বাসা বাঁধে শরীরে দুইবার অস্ত্রোপচার করার পর বেঁচে ফিরলেও বিছানা নিলেন।

সংসার পথে বসল,বাকি দুই সন্তানের পড়াশোনা বন্ধহল। এখন আধপেটা খেয়ে দিন কাটে। সেই পরিবারে ওই চিরকূট যেন আশার সঞ্চার করল। প্রথমে সীমার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সেই চিঠি দেখানো হল, তারপর সেখান থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অফিসে ছুটলেন সবাই।ঠিকানা নেই চিঠিতে ডাক বিভাগের স্ট্যাম্প দেখে বোঝা গেল মুম্বই থেকে চিঠি এসেছে। এরপর ক্যানিং থানায় যোগাযোগ করে গোটা ঘটনাটি জানানো হয়। থানা থেকে মুম্বই পুলিশকে বিষয়টি জানালে সেদিন আট ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট যৌনপল্লি থেকে ওই নির্যাতিতাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এরপর একমাস কেটে গিয়েছে। উদ্ধারের পর নাবালিকা সীমাকে মুম্বইয়ের এক হোমে নিয়ে রাখে পুলিশ। তারপর প্রশাসনিক কাজ মিটলে কলকাতা পুলিশের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়। গত বুধবার পুলিশ প্রশাসনের লোকজন সীমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে। এদিকে বাড়িতে ফিরে শান্তির বদলে একআকাশ দুঃখ সীমাকে ঘিরে ধরে।কী করবে এবার সে, জানে না।তবে আড়কাঠি রাকেশ মোল্লাকে সামনে পেলে তার উপযুক্ত শাস্তি নিজেই দেবে সীমা। মেরেই ফেলবে অভিযুক্তকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =