নয়াদিল্লি: করোনা অতিমারি বদলে দিয়েছে আমজনতার স্বাভাবিক জীবন। শুধু প্রাণহানি বা আক্রান্ত হওয়াই নয়, শারীরিক দূরত্ব রক্ষার কঠিন অনুশাসনে সামাজিক কাঠামোটাই নড়ে গিয়েছে। বিধির গেরোয় চাইলেও একছুটে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে না প্রিয়জনের কাছে, তা সে সুস্থই থাক বা মরণাপন্ন৷ তার সঙ্গে রয়েছে কোভিড যোদ্ধাদের কর্তব্যের টানও৷ মানসিক যন্ত্রণা কুরে কুরে খেলেও উপেক্ষা করা যাচ্ছে না ভাইরাসের ভয়াল থাবা৷ মায়ের অবর্তমানে যে ঠাকুমা তাঁকে সন্তানস্নেহে বড় করে তুলেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েও চিরবিদায়ের মুহূর্তে হাজির থাকতে পারলেন না দিল্লির এইমসের নার্সিং আধিকারিক রাখি জন৷ শুধুই ভেঙে পড়লেন কান্নায়, বেদনায় বিদীর্ণ হল হৃদয়৷
কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের বাসিন্দা রাখি কর্মসূত্রে দিল্লি নিবাসী। রবিবার তাঁর কাছে বাড়ি থেকে ফোন আসে৷ পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারেন, করোনা কেড়ে নিয়েছে ঠাকুমার প্রাণ৷ কিন্তু সেই ঠাকুমাকে শেষ দেখা হল না৷ ঠাকুমার মারা যাওয়ার খবর পেয়ে সেদিন হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়েছিলেন বটে, তবে ছুটে যেতে পারেননি দেশের বাড়িতে৷ একদিকে কোভিড বিধি তো আছেই, তার ওপর হাসপাতালে ঠাসা করোনা আক্রান্ত৷ তাঁদের দেখভাল না-করে ঠাকুমার শেষকৃত্যে যোগ দেওয়া অনুচিত হবে বলেই মনে করেছিলেন রাখি৷ যে গিয়েছে, সে তো চলেই গিয়েছে৷ যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের তো বাঁচাতে হবে৷ রাখি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর ছোটবেলাতেই মৃত্যু হয়েছিল মায়ের। তার পর থেকে মায়ের স্নেহে ঠাকুমার কাছেই বড় হওয়া৷ তার জন্যই তো ঠাকুমাকে আম্মা বলে ডাকতেন রাখি৷ ঠাকুমা যে তাঁর কাছে ছিল মায়ের চেয়েও বেশি৷
রাখির কথায়, ‘আম্মার মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমি একেবারেই ভেঙে পড়ি৷ খুবই অসহায় বোধ করতে থাকি৷ নিজেকে যেন অনাথ মনে হচ্ছিল৷ আমার স্বামীই সেদিন ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলল। কোভিড বিধির জন্য ঠাকুমার শেষকৃত্যে আমি থাকতে পারব না সেটা জানতাম৷ তাছাড়া হাসপাতালে অনেক রোগী রয়েছেন। আমি যদি তাঁদের জীবন বাঁচাতে পারি, তা হলে সেটা আম্মাকেই উৎসর্গ করব। এখানে আমাকে প্রয়োজন। তাই আমি স্থির করলাম, নিজের কর্তব্য করে যাব৷’ বাড়ি থেকে এসেছে ঠাকুমার শেষকৃত্যের ভিডিও৷ তবে তা এখনও দেখেননি রাখি৷ দেখলেই যে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়বেন৷ এখন যে তাঁর মানসিক কাঠিন্য ধরে রেখে কর্তব্যে অবিচল থাকার সময়৷