কলকাতা: জন্মের প্রমাণপত্র সংগ্রহের জন্য ইদানিং ভিড় উপচে পরছে কলকাতা পুরনিগমের সদর দপ্তরে।যারা লাইন দিচ্ছেন তাঁদের অধিকাংশই আবার সংখ্যালঘু ।মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক যে কাটছে না তা এর থেকেই পরিস্কার হচ্ছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। পুর নিগম সূত্রে খবর মাস দুয়েক আগেও প্রতিদিন গড়ে ১০০টি করে জন্মের শংসাপত্রের ফর্ম দেওয়া হত পুরভবনের সদর দপ্তর থেকে।চাহিদা না মেটাতে পারায় এখন সেই সংখ্যাটা ২০০ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হবে এই নিয়ম।
পুর কমিশনার খলিল আহমেদ এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছেন। । শুধু পুরনিগমের সদর নয় প্রতিটি বরো অফিস থেকেও দেওয়া হচ্ছে জন্মের শংসাপত্র। বরো অফিসগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনওভাবেই জন্মের শংসাপত্র দিতে দেরি করা যাবে না। কোনওরকম অভিযোগ যেন না আসে। পুরনিগমের কর্মীরা বলছেন, জন্মের ২১ দিনের মধ্যে যারা শিশুর জন্মের শংসাপত্র তুলছেন তাদের নর্মাল রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ বছর বাদে এখন নিতে আসছেন সেইসমস্ত প্রৌঢ়দের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণ-সহ আবেদন করতে হচ্ছে। পুরনিগমর কর্মীরা উপযুক্ত প্রমাণপত্র খতিয়ে দেখছেন। তাতেই সময় লাগছে।
জন্মের শংসাপত্র তোলার লাইনে সত্তর ছুঁইছুঁই এক বৃদ্ধের কথায় আতঙ্কের গোড়াটা খুঁজে পাওয়া গেল। ১৯৫০ সালে জন্মেছেন, আচমকা এখন কেন জন্মের শংসাপত্রের প্রয়োজন পড়ল? ওই বৃদ্ধের কথায় এখন সিএএ লাগু হয়েছে। আমি যে কলকাতায় জন্মেছি তার প্রমাণ তো দিতে হবে। পুরনিগমের হেড অফিসে যাঁরা জন্মের শংসাপত্র নিতে আসছেন এমন অনেকেই জানিয়েছেন, ‘সিএএ লাগু হয়ে গিয়েছে। এটা এখন একটা আইন। মুখ্যমন্ত্রী যতই বলুক এ রাজ্যে সিএএ হবে না। আমরা ভরসা পাচ্ছি না। কাল কাগজ দেখতে চাইলে আমরা কোত্থেকে দেখাব। তাই আগেভাগে সমস্ত কিছু জোগাড় করে রাখছি।’ কলকাতা পুরনিগমর বার্থ সার্টিফিকেট বিভাগে কাজ করা এক কর্মী জানিয়েছেন, যেদিন থেকে সিএএ লাগু হয়েছে ভিড় অদ্ভুতভাবে বেড়ে গিয়েছে। পুরনিগমর কর্মী সংখ্যা কম। এই ভিড় সামলানো যাচ্ছে না। পুরনিগময় বার্থ সার্টিফিকেট তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে তৌফিক আহমেদ নামে এক যুবক জানিয়েছেন, ‘টানা তিনদিন ধরে তিনি পুরনিগময় আসছি। বার্থ সার্টিফিকেট তুলতে। কিন্তু লোক কম থাকায় ওরা দিতে পারছে না।’ কেন এত তাড়াহুড়ো? তৌফিকের কথায়, ‘আমার জন্মেরপ্রমাণ পত্র নিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে চাই না।’ ভিড়ের মধ্যে কারা রয়েছে? দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘুরাই বেশি আতঙ্কিত সিএএ নিয়ে। সংখ্যার অনুপাতে তারাই বেশি আসছে। আর আসছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। যাদের জন্ম ১৯৬০ সালের আগে এমন মানুষদেরই লাইন লেগে গিয়েছে পুরভবনে।