কলকাতা: লকডাউন শব্দটা এখন কোভিড-১৯-এর থেকেও মারাত্মক আতঙ্কের হয়ে উঠেছে ঘরবন্দী মানুষের কাছে। অবশ্যই তাদের কাছে যারা লকডাউনের নিয়মবিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। তবে এরমধ্যেই পসংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে ২১দিনের লকডাউন যথেষ্ট কিনা তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা প্রশাসন। আর এই অবস্থায় পর্যাপ্ত খাবার থেকে শুরু করে অত্যাবশ্যক নিত্যপ্রয়োজনী প্রতিটি জিনিসের পর্যাপ্ত জোগান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত থেকে দরিদ্র এবং দারিদ্রসীমার নীচে আছেন যারা তাদের জন্য আর কিছু না হলেও পর্যাপ্ত খাবারের জোগান সুনিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার বিশেষ রেশনের কথা ঘোষণা করেন।
সেখানে বলা হয় যাদের রেশন কার্ড নেই বা নতুন ডিজিটাল রেশন কার্ড হয়নি তারাও বঞ্চিত হবেননা। অন্তত ৪৫ লক্ষ আবেদনকারী এখনও কার্ড পাননি। মূলত এই গ্রাহকদের জন্যই বিশেষ ‘ফুড কুপন’ তৈরি হয়েছে। কিন্তু রেশন বন্টন নিয়েই যেখানে নানান বঞ্চনা, গাফিলতি এমনকি গোলমালের খবর আসছে, রাজ্যে নানা প্রান্ত থেকে সেখানে 'ফুড কুপন' ঠিকঠাক হাতে না পৌঁছলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। এই কুপন সংগ্রহ করতেও ভিড় করতে পারে সাধারণ মানুষ । তাই সবদিক চিন্তাভাবনা করে গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে এই কুপন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য প্রশাসন। এই কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও)।
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক স্তরে কি কি করনীয়, তা স্থির করতে শুক্রবার কয়েক দফায় জেলা ও রাজ্য স্তরে বৈঠক করেন খাদ্য দফতরের কর্তারা। জেলাশাসকদের সঙ্গেও কথা বলেন। জানা যায় আবেদন করেও অনেকে এখনও রেশন কার্ড পাননি। তাঁদের জন্য ‘ফুড কুপন’-এর ব্যবস্থা করছে খাদ্য দফতর। খাদ্য দফতর সেই তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠাচ্ছে। জেলা থেকে তা যাচ্ছে ব্লক স্তরে। সেখান থেকে কুপন বিলি হবে। কারা কুপন পাচ্ছেন, তার তালিকাও থাকবে রেশন দোকানের বাইরে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে সরকারি ছাপাখানা বন্ধ থাকায় নতুন কার্ড তৈরি করা যাচ্ছে না। তাই কুপন তৈরি করে খাদ্যশস্য বণ্টনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। দু’-এক দিনের মধ্যেই এই ফুড কুপন তৈরি হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি। এরপর এই কুপনের মাধ্যমে রেশন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে ১০ এপ্রিলের পরে।
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবার ও বিশেষ পরিবার, রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১ এবং বিশেষ জনজাতি— এই চারটি বিভাগের উপভোক্তারা বিনামূল্যে রেশনে চাল, গম ও আটা পাবেন। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-২ রেশন কার্ড থাকলে ১৩ টাকা কেজি দরে চাল এবং ন’টাকা কেজি দরে গম মিলবে।
বুধবার প্রথম দিনেই ২০% উপভোক্তা রেশন নিয়েছেন বলে খাদ্য দফতর সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার, দ্বিতীয় দিনেও রেশন দোকানগুলিতে ভিড় করেন মানুষ। দুদিন ধরে নানান গোলমালের খবর পাওয়া যায়।
অন্যদিকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে মারাত্মক সমস্যার কথা জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন। চালক এবং মালবহনকারীদের অভাবে রেশন দোকানগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছনো যাচ্ছেনা। ডিলারেরা ততটা পরিমাণ সামগ্রী পাচ্ছেন, সেই অনুযায়ী বন্টন করছেন। তবে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, গণবণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত যে- কর্মীরা বাড়ি চলে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরপর গুদাম থেকে খাদ্যশস্য দ্রুত রেশন দোকানে পৌঁছে দেওয়া যাবে বলেও আশ্বস্ত করছেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা।