নয়াদিল্লি: বড়সড় নাশকতার ছক বানচাল৷ কেরল এবং বাংলায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে নয় আল-কায়দা জঙ্গিকে গ্রেফতার করল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)৷ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে শনিবার ভোরে গ্রেফতার করা হয় এই নয় জঙ্গিকে৷ তবে, এই নয় জঙ্গিকে গ্রেফতারির পর গোয়েন্দাদের নজরে রয়েছে নব্য জেএমবির ৪টি গোষ্ঠী৷ বাংলার ১০ জেলায় নব্য জেএমবির ৪টি গোষ্ঠী সক্রিয় বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা৷
বাংলায় অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠন৷ চলতি সপ্তাহে সংসদে লিখিত জবাব দিয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ সেই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মুর্শিদাবাদে তল্লাশি চালিয়ে বড়সড় সাফল্য পেল এনআইএ৷ এক অফিসার জানান, ‘‘বাংলা ও কেরল সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আল-কায়দা মডিউল গড়ে ওঠার খবর ছিল এনআইএ-র কাছে৷ দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাশকতার ছক কষছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ নিরপরাধ মানুষদের হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল৷’’ এদিন বাংলা থেকে গ্রেফতার করা হয় ছয় আল-কায়দা জঙ্গিকে৷ কেরল থেকে ধরা পড়ে তিন জন৷ এই জঙ্গিগোষ্ঠী ভারতে ফিদায়েঁ হামলার পরিকল্পনা করছিল বলেও এনআইএ সূত্রের খবর৷
অন্যদিকে, বাংলার বুকে আরও ৪টি জঙ্গি গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে আইএস ভাবধারার গজিয়ে উঠেছে নব্য জেএমবি সংগঠন৷ ফলে ঘুম ছুটেছে এপার বাংলা, ওপার বাংলার গোয়েন্দাদের৷ গেয়েন্দা সূত্রে খবর, চারটি জঙ্গি সংগঠনের টার্গেটে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের গুরুত্ব শহর৷ ওপার বাংলায় হামলারও ছক থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা৷ পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০টি জেলায় বিভিন্ন গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা৷ তবে, জঙ্গিদের শ্রীঘরে পাঠাতে তৎপর গোয়েন্দাপা৷ গত একমাসে বাংলাদেশে নব্য জেএমবির অন্তত ১৫ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে হাসিনা সরকার৷ ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে ৪টি গোষ্ঠীর কার্যকলাপের নতুন তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে খবর৷
গোয়েন্দা মহলের একাংশের মতে, নাম, পদবি বদলে মুখোশের আড়ালে সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গিরা৷ সেখানে ‘লোন উলফ’ বা একক হামলার ছক কষছে জঙ্গিরা৷ এই ছকের সুবিধা হল, একজন জঙ্গি হামলা করায় শক্তিক্ষয় কম হবে৷ একক জঙ্গি খুঁজতে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে নজর দিয়েছে ‘আল বাঙালি’ গোষ্ঠীর, খবর গোয়েন্দা সূত্রে৷ গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, উত্তরের ৪ জেলা কোচবিহার, মালদহ, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুরের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে টার্গেট রয়েছে ‘আল বাঙালি’ জঙ্গি গোষ্ঠীর৷ গোয়েন্দা জানতে পেরেছেন, হুগলি থেকে শুরু করে বীরভূম, নদীয়া জেলায় ৩টি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে৷ নব্য জেএমবি ওয়াহেদ গ্রুপ, সিলেটি গ্রুপ ও খুলনা গ্রুপ, এই ৩টির মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ওয়াহেদ গ্রুপ৷ যার অন্যতম প্রধান নেতা আব্দুল ওয়াহেদ ইয়েমেন৷ অপর দু’টি গ্রুপের একাধিক সদস্য বাংলাদেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে খতম৷ বাংলাদেশে জঙ্গিদমন শাখার আশঙ্কা, আচমকা জঙ্গি গোষ্ঠীর ‘নিষ্ক্রিয়তা’ অন্য কোনও ঝড়ের পূর্বাভাস!
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত-মেধাবী পড়ুয়াদের মধ্যে থেকে সদস্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে ৪টি গোষ্ঠী৷ নতুন করে শক্তি বাড়ানোর ছক রয়েছে৷ নতুন পরিকল্পনায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘চেইন’ পদ্ধতিতে সদস্য লক্ষ্যমাত্র রয়েছে জঙ্গিদের৷ টাকা হোক কিংবা নারী লোভ দেখিয়ে সদস্যদের সক্রিয়তা বাড়ানোর কাজ চলছে৷ চলছে মগজধোলাই৷