কলকাতা: নববর্ষ। অথচ বর্ষবরণের ডালা হাতে নতুন বছরকে শুরু করার উন্মাদনা নেই বাঙালির মনে। উল্টে চারদিকটা বড্ড থমথমে। যেন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে খোদ নববর্ষ উৎসব! পয়লা বৈশাখের উন্মাদনা নেই। আছে লকডাউন। আর আছে করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক। মাস আড়াই আগে একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল চিন। সেই দেশের নববর্ষ উৎসবের জন্যও চলছিল তোড়জোড়। কিন্তু বিধি বাম। তবে কিছুটা স্বস্তিতে এখন চিন।
পয়লা বৈশাখ নিয়ে বাঙালির উন্মাদনা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেজে ওঠে বাঙালির ঘর বারান্দা। পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুনকে আহ্বানের অন্য নাম নববর্ষ। কিন্তু ১৪২৭ যেন নতুন বছরের চিরাচরিত ছন্দে নেই। উৎসব উন্মাদনার পরিবর্তে আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে রয়েছে ত্রাস। প্রত্যেকটা মুহূর্ত যেন আতঙ্কে কাটাচ্ছে বাঙালি। গোটা বিশ্ব জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে কোভিড ১৯। সংক্রমণ ক্রমে বেড়ে চলেছে এই দেশেও। স্বাভাবিকভাবেই প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি নিতে রাজি নন কেউই। প্রশাসনের তরফে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তাছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নিজের জন্য নয়, দশের জন্য, দেশের জন্য সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলা জরুরি। আবেগ অনুভূতি কি শোনে যুক্তির দাবি? শোনে প্রয়োজনের কথা? পয়লা বৈশাখ। অথচ উৎসবে মেতে উঠবে না বাঙালি!
শনিবার। ২৫ জানুয়ারির জন্য মুখিয়ে ছিল চিনও। নববর্ষ উদ্যাপনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল চিন। আচমকাই ঠিক দু'দিন আগে চিনের উহান শহরে জারি হয় লকডাউন। ১ কোটিরও বেশি মানুষ হঠাৎই ঘরবন্দি। তাও আবার নববর্ষের উৎসবের মধ্যে। এমন কঠিন সিদ্ধান্তই নিয়েছিল চিন। করোনার মোকাবিলায় অন্য কোনও উপায় ছিল না তাদের হাতে। তখনও ছড়ায়নি গোটা বিশ্বে। হয়তো কেউ কেউ আন্দাজও করতে পারেননি কোভিড ১৯ ভাইরাসের ভয়াবহতার কথা। আজ 'ফার্স্ট কান্ট্রি' হিসেবে পরিচিত মার্কিন মুলুকের মতো দেশও নাস্তানাবুদ। কিন্তু চিন ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। সংবাদসূত্রের দাবি, কোভিড ১৯ নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত, সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও চিন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
বিশেষজ্ঞরা চিনের তৎকালীন পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংকে মেনে চলারই পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকারের তরফেও করা হচ্ছে কঠিন পদক্ষেপ। এই পরিস্থিতিতেও উৎসব, উন্মাদনাকে একবারে উপেক্ষা করতে পারবে বাঙালি? মনে মনেই ঠিক পালন করবেন তারা। করোনার বিরুদ্ধেই হয়তো শক্তি হয়ে উঠবে বাঙালির পয়লা বৈশাখ। ভেঙে না পড়ে বরং উঠে দাঁড়াই করোনার বিরুদ্ধে। নিয়ম মেনে মনে মনেই মাতি উৎসবে।