গৃহবন্দি বাঙালির অবসাদ কাটাতে অভিনব উদ্যোগ ঐক্য বাংলার

গৃহবন্দি বাঙালির অবসাদ কাটাতে অভিনব উদ্যোগ ঐক্য বাংলার

কলকাতা: বিশেষজ্ঞদের মতে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে এইমূহূর্তে একমাত্র উপায় বলতে সামাজিক তথা পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা। আর এই দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে বিশ্ব জুড়ে মানুষ এখন ঘরবন্দী। ভারতেও ২১ দিনের লকডাউন। এর জেরে কর্মোদ্যম, আমোদপ্রিয়, ভ্রমন পিপাসু বঙ্গবাসীর যেন নাভিঃশ্বাস উঠেছে। বন্দীদশার মানসিক চাপ করোনা ভাইরাসের থেকেও ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে অনেকের কাছেই। আর তাই এই লকডাউনের দিনগুলোতে অভিনব “বাঙালির গৌরব সপ্তাহ” পালন করল 'ঐক্য বাংলা'।

আত্মীয় – পরিজন – বন্ধু – বান্ধব – দৈনন্দিন কাজ-কর্ম থেকে দূরে থেকে মানুষ বিমর্ষ, আতঙ্কিত। কিন্তু এই দিনগুলোকে গঠনমূলকভাবেও ব্যবহার করা যায় বলে মনে করে বাংলার প্রথম মুক্ত পন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ঐক্য বাংলা। আর এই উদ্দেশ্য নিয়েই ২২শে মার্চ থেকে ২৯শে মার্চ, বাংলায় লকডাউন এর প্রথম সপ্তাহে বাঙালির গৌরবের ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরতে 'গৌরবসপ্তাহ' কর্মসূচি পালন করল 'ঐক্য বাংলা'। ভাবছেন জমায়েত ছাড়া কর্মসূচি হয় নাকি? কিন্তু যেমন অভিনব কর্মসূচি, তেমনই অভিনবত্ব কর্মসূচি পরিচালনায়। সবটাই অনলাইনে। কারণ এই ঘরবন্দী দশায় মানুষের অপরিহার্য সঙ্গী যখন একটি স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট এবং অবশ্যই স্যোশাল মিডিয়া, তখন সমস্যা কোথায়? তাই লকডাউনের প্রথম সপ্তাহ জূড়ে লেখা , ভিডিও, এবং ঐক্য যোদ্ধাদের করা লাইভের মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন এক একটি আলাদা বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়। গৌরবসপ্তাহ সম্পর্কে ঐক্য বাংলা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতি সুলগ্না দাশগুপ্তর মতে,  বাঙালির কৃতিত্ব শুধুমাত্র শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি জগতেই সীমাবদ্ধ বলেই ধারণা করা হয়। কিন্তু ক্রীড়া, বিজ্ঞান, চিকিৎসা জগৎ, এমনকি ব্যবসার জগতেও মে বাঙালি স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত সেই সচেতনতা বাঙালি তথা ভারতীয়দের মধ্যেও থাকা উচিত। বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের যে অধ্যায়গুলি সম্পর্কে বঙ্গবাসীর বেশিরভাগ অংশ সেই পরিমাণে ওয়াকিবহাল নয় , ঠিক সেই দিকগুলিকেই  তুলে ধরা হয়েছে এই কর্মসূচির মাধ্যমে। বিশেষত বিজ্ঞান, চিকিৎসা, বাণিজ্য, ক্রীড়া, এই ক্ষেত্রগুলি। তবে ভাষা আন্দোলন এমনকি বঙ্গভঙ্গকেও বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ।

“বিজ্ঞান জগতে বাঙালি” মূলত এই বিষয়ের ওপরের গুরুত্ব দিয়ে ঐক্য বাংলা তার এই গৌরবসপ্তাহ কর্মসূচির সূচনা করে। বাঙালি জাতির বিজ্ঞানজগতের একজন দিকপাল তেমন, সত্যেন্দ্রনাথ বসু , মেঘনাদ সাহা, বা সাম্প্রতিক তর অমলকুমার রায়চৌধুরীর মত বাঙালি বৈজ্ঞানিকদের ওপর আলোকপাত করা হয়।  হার্ড সায়েন্স যেমন পদার্থবিজ্ঞানে বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা অনেকেরই অজানা।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে বাঙালি নারীজখতির পথপ্রদর্শক কাদম্বিনী গাঙ্গুলী সেযুগে নারী সংক্রান্ত সমস্ত সামাজিক সমালোচনাকে তুচ্ছ করে একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজের কাজে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। বর্তমানে  নারী স্বাধীনতা এবং নারীর অধিকারের দিক থেকে মুখ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। গৌরবসপ্তাহ কর্মসূচির অন্যতম বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছিল ভাষাআন্দোলকেও। মানভূম ভাষা আন্দোলনের  হিন্দি আগ্রাসন ও বিহার রাজ্য সরকারের হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার যে ঘৃণ্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাঙালি  কিভাবে রুখে দাঁড়িয়ে অহিংসার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের দাবি দাওয়া আদায় করেছিলেন সেই গৌরবময় ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে।

যেভাবে বাঙালিকে বঞ্চিত করতে বাংলা ভাগের চক্রান্ত,  সর্দার বল্লভভাই পাটেল সহ তৎকালীন কংগ্ৰেস হাই কম্যান্ডের শরৎচন্দ্র বসুকে অপমান সবটাই ব্যখ্যা করা হয়েছে এই 'গৌরবসপ্তাহে'।এছাড়াও ক্রীড়াজগতে বাঙালি, বাণিজ্য জগতে বাঙালি ইত্যাদি নানা বিষয় ছুঁয়ে যায় ঐক্য বাংলার এই সচেতনতা মূলক অভিনব কর্মসূচিটি।এই কর্মসূচির সমর্থকদের প্রতিক্রিয়াও ছিল উল্লেখযোগ্য।   প্রচুর বাঙালি এই কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।  এই অভিনব কর্মসূচি কে স্বাগত জানিয়েছেন গৃহবন্দী বাঙালিও। আগামী দিনেও এই ধরণের কর্মসূচি পালনের  অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আর এরমধ্যেই বাঙালির কাছে অত্যন্ত মনগ্রাহী হয়ে উঠেছে 'ঐক্য বাংলা'। বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এরমধ্যেই নানান কর্মসূচি ও প্রতিবাদমূলক কর্মসূচি পালন করে চলেছে। যেমন, শপিং মলে বাঙালি গায়ক নিগ্রহের প্রতিবাদ, ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে অভিনব সমীক্ষা,কেরলে বাঙালি শ্রমিককে নিগ্ৰহের প্রতিবাদ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সপ্তাহ ইত্যাদি।  এই ধরণের একের পর এক বিভিন্ন স্বাদের কর্মসূচির মাধ্যমে  বাঙালি সমাজের মধ্যে সাড়া ফেলতে শুরু করে দিয়ে দিয়েছে সংগঠন। আগামী দিনেও তারি বাঙালির হৃদয়ে আত্মগৌরব জাগরিত করতে পারবে, এবং বাঙালি জাতিকে তার অধিকার অর্জনের লড়াইতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলেই আশাবাদী ঐক্য বাংলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *