নন্দীগ্রাম আন্দোলন কি তবে পুরোটাই গট আপ? তাহের-বক্তব্যে নতুন বিতর্ক!

নন্দীগ্রাম আন্দোলন কি তবে পুরোটাই গট আপ? তাহের-বক্তব্যে নতুন বিতর্ক!

38bde03cd8f008adcf43338f2e87b89f

নন্দীগ্রাম: ফের ১৪ বছরের জমি আন্দোলনের প্রসঙ্গ চলে এসেছে সামনে৷ সৌজন্যে, নন্দীগ্রামের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা, জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা শুভেন্দুর প্রাক্তন সঙ্গী আবু তাহের৷

শনিবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ কমিটির এক স্মরণ সভায় আবু তাহের দাবি করেছেন, ‘‘নিশিকান্ত মণ্ডলকে শুভেন্দু অধিকারীর লোক লাগিয়ে খুব করেছিলো৷ এটা আমি পরে জানতে পারি৷’’ এরপরই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘জানেন, কেন বলছি? নিশিকান্ত মণ্ডলের কাছে যে মোবাইলটা ছিল লাস্ট কল কে করেছিল? সেই মোবাইল নম্বর ধরে খুনীকে খুঁজে পাওয়া যেত। তিনি মোবাইলটা নিয়ে নিয়েছিলেন। আমি যখন বললাম, মোবাইল নম্বারটা চেক করুন। তিনি বলেছিলেন, তাহের আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো! জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না! আমি আর প্রশ্ন করলাম না।’’ একই সঙ্গে জোরাল অভিযোগ করেছেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে, ‘‘ শুধু নিশিকান্ত নয়, নন্দীগ্রামে বয়ালে সমর মাইতিকে লোক লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। আনিসুর রহমানকে ফাঁসানো হয়েছে। এইভাবে একটার পর একটা খুন করে যাচ্ছে। এত বড় ভিলেন ভারতবর্ষে কোথাও দেখিনি। দেখতে সুন্দর, মিষ্টি মিষ্টি কথা। কিন্তু তার উপরে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে!’’

নন্দীগ্রামের ভোটে এবারে মুখোমুখি লড়াইয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী৷ ২৯ মার্চ প্রচারের শেষ দিনে রেয়াপাড়ার জনসভা থেকে তৃণমূল নেত্রী বিস্ফোরক দাবি করে বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আসছে, পুলিশের পোশাক পরে অনেকে গুলি চালিয়েছিল। হাওয়াই চটি পরে এসেছিল। এবারেও সেসব কেলেঙ্কারি করছে। এই বাপ-ব্যাটার পারমিশান ছাড়া সেদিন পুলিশ নন্দীগ্রামে ঢুকতে পারত না, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি।”

স্বাভাবিকভাবেই দুটি ঘটনাকে সামনে রেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, জমি আন্দোলনের নামে পুরোটাই কি তৃণমূলের গটআপ গেম ছিল? পুলিশ ঢোকানোয় কি সত্যি শুভেন্দুর হাত ছিল? সিপিএমের সেই সময়কার দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা, দলের বর্তমান রাজ্য কমিটির সদস্য হিমাংশু দাস জানিয়েছেন কড়া প্রতিক্রিয়া৷ দাবি করেছেন, ‘‘অপেক্ষা করুন৷ ওই সব পাপ ওদের মুখ দিয়েই বেরুচ্ছে৷ সব একদিন সামনে আসবে, প্রমাণিত হবে আমরা নয়, ওরাই দায়ী ছিল৷’’

২০০৭ সালের গোড়া থেকেই শিল্পের জন্য সালিম গোষ্ঠীর জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে তপ্ত হয়ে উঠেছিল নন্দীগ্রামের মাটি৷ রাস্তা কেটে জমি আন্দোলনে নেমেছিলেন বাসিন্দারা৷ গড়ে তুলেছিলেন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি৷ পরে যে কমিটির নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল সেদিনের বিরোধী দল তৃণমূলের হাতে৷ ১৪ মার্চ পুলিশ ঢুকতে গিয়ে তালপাটি খালের গোকুলনগরে ঘটেছিল গণহত্যা৷ মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীরা৷ অভিযোগ উঠেছিল, এলাকার দখল নিতে পুলিশের সঙ্গে চটি পরে ঢুকেছিল সিপিএমের হার্মাদরা৷

সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে নন্দীগ্রামের সিপিএম নেতা হিমাংশু দাস বলছেন, ‘‘নন্দীগ্রামে ওই সময় গণ আন্দোলনের নামে এলাকা দখল, ভাঙচুর, লুঠপাট, খুন খারাপি সব করা হয়েছিল৷ শিল্প হবে কি না হবে না সেটাই ঠিক হল না, তার আগেই সব নিয়ে নেওয়া হবে, সব ভেঙে দেওয়া হবে বলে ওরা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মানুষকে ভয় ধরিয়েছিল৷ আজ ওই সব পাপ ওদের মুখ দিয়েই বেরুচ্ছে৷ সব একদিন সামনে আসবে, প্রমাণিত হবে আমরা নয়, ওরাই দায়ী ছিল৷’’ নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পালের দাবি, ‘‘নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে গিয়েছিলেন৷ তাই এখানে শুভেন্দুদাকে কালিমালিপ্ত করতে তৃণমূল মিথ্যে কুৎসা করছে৷ মানুষই এর জবাব দেবে৷’’ যদিও এ বিষয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল সুপ্রিমো ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তৃণমূল নেতার আবু তাহের মন্তব্য ঘিরে নতুন করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *