রাজ্য বাজেটে কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন নেতাজি সুভাষ?

রাজ্য বাজেটে কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন নেতাজি সুভাষ?

কলকাতা: তিনি আছেন। তিনি থাকবেন। সুভাষ চন্দ্র বোস ফিরে আসেনি। কিন্তু বাঙালি জীবন থেকে তিনি কখনই অন্তর্হিত হননি। তিনি সবসময় বঙ্গজীবনের আলোচনার বিষয়বস্তু। নিবার্চনের সময় তো বটেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় শুক্রবার ২০২১-২২-এর বাজেটের বিবৃতি এবং ভোট অন একাউন্ট উপস্থাপন করায় সময় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু’র দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে নিজেকে সরিয়ে রাখলে,  এদিন মুখ্যমন্ত্রী ২০২১-২২-এর বাজেট উপস্থাপন করেন। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার ঘোষিত উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি ছিলেন ‘নেতাজি রাজ্য পরিকল্পনা কমিশন’ এবং নেতাজির নামানুসারে কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ ব্যাটালিয়ন। তিনি সমস্ত জেলায় ‘জয় হিন্দ ভবন’ নামে সমাজকেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়শই মোদি সরকারকে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন ভেঙে দেওয়ার জন্য এবং নীতি আয়োগ নিয়ে আসার জন্য সমালোচনা করেছেন। তার বাজেটে নেতাজি রাজ্য পরিকল্পনা কমিশন হিসাবে পরিচিত বাংলার জন্য একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠনের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশাসনিক সংস্থার শর্তাবলী বক্তৃতায় বিশদভাবে বর্ণিত হয়নি, তবে সরকার এই প্রকল্পের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আবার রাজ্য সরকার
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসকে শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য মোট ২১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

ভোটের আগে হঠাৎ নেতাজি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?২৩ জানুয়ারি আসে যায়। বাঙালি একটি ছুটি পায় মাত্র। কিন্তু ২০২১ এর ২৩ জানুয়ারি ঘটনাবহুল ছিল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু পশ্চিমবঙ্গে একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ নির্বাচনের আগে নেতাজির মত এক সুউচ্চ বাঙালিকে সামনে রেখে বাঙালি আবেগকে ছুঁতে চাইবে বিজেপি – তা স্বাভাবিক। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, নেতাজি বাঙালি, ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক। কংগ্রেস এবং কমিউনিস্টরা তাকে প্রাপ্য সম্মান দেয়নি। এখন প্রশ্ন হল গুজরাটে বিজেপি যেভাবে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ইমেজ ও আবেগকে কাজে লাগিয়েছিল, একইভাবে বাংলাতেও নেতাজির আবেগকে কাজে লাগাতে পারবে কি। প্যাটেল গুজরাটের এবং নেতাজি বাংলার। কিন্তু মিল তো আছেই।  নেতাজি গান্ধী-নেহরুর সঙ্গে সহমত হননি। গান্ধীজির প্রার্থীকে হারিয়ে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন।

নেহেরু এবং নেতাজি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু বাংলায় নেহরু-নেতাজিকে বন্ধু হিসাবে কখনও দেখা হয়নি। মনে করা হয় গান্ধী-নেহরু তাকে যোগ্য সম্মান দেননি। তাঁর অন্তর্ধানের যথাযথ তদন্ত করেনি স্বাধীন ভারতের কংগ্রেস সরকার। কোথাও না কোথাও নেতাজির অন্তর্ধানের পিছনে গান্ধী-নেহরুকে জুড়ে দেওয়া হয়। বাংলায় অনুভূতি হ’ল নেহেরু-গান্ধী পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে নেতাজির মৃত্যুর বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হয়নি। এই আবেগকে ভোটযন্ত্রে গতিবেগ পরিণত করতে চায় বিজেপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + thirteen =