কলকাতা: ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র৷ বুধবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে করে সেই ‘আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পে’র ব্যাখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন৷ পাল্টা নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রের প্যাকেজকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেও মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ‘মাটির সৃষ্টি’ নামের নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন তিনি৷ কিন্তু, করোনা আবহে যখন কাজ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ৷ থমকে গিয়েছে কেন্দ্র-রাজ্যের সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া৷ কিন্তু, এই মহামারীর পরিস্থিতি কাটিয়ে নতুন নিয়োগ, কর্মসংস্থান আদৌ হবে? এখনও অধরা কেন্দ্র-রাজ্যের পিঠোপিঠি দুই ঘোষণা!
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বাঁচাতে ঋণের বন্দোবস্ত করেছে কেন্দ্র৷ কিন্তু, বদলে গিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সঙ্গা৷ বছরে ১০০ কোটি টাকা লেনদন হলেই মাত্র ৩ লক্ষ টাকার এমএসএমই ঋণ পাওয়া যাবে৷ বাকি ছোট সংস্থাগুলি আদৌ কি কোনও সুবিধা পাবে? এখনও অধরা তাদের সমস্যা৷ তবে সুখবর একটাই, ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ টিডিএস এবং টিসিএস কমানো হবে৷ আগামী ৩ মাসের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১২ শতাংশের বদলে কর্মীদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ জমা দেওয়ার মতো একাধিক সুবিধার কথা বলা হলেও, করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনও স্পষ্ট উল্লেখ করতে শোনা গেল না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে৷ সারা দেশের হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছে৷ কর্মহীন লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক৷ আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বহু মানুষ৷ আগামী দিনে সেই সব মানুষগুলোর কী হবে, সেই বিষয়ে একটি বাক্যও খরচ করলেন না তিনি৷ কাজ না থাকলে মানুষ খাবে কি? জীবনধারণই বা করবে কী ভাবে? এই প্যাকেজে সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গিয়েছে৷
অন্যদিকে, কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজের কড়া সমালেচনা করে এদিন বিকেলেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোরাধ্যায়৷ কেন্দ্রের অর্থনৈতিক প্যাকেজকে ‘বিগ জিরো’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ তাঁর অভিযোগ, এই প্রকল্পে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে৷ তাই রাজ্যের মানবিক মুখ হিসাবে তিনি ঘোষণা করলেন অ্যাড হক বোনাস৷ ফেস্টিভাল অ্যাডভান্স বাবদ গত বছরের তুলনা বাড়ানো হল ২ হাজার টাকা৷ কিন্তু এই ঘোষণায় কর্ম সংস্থান কোথায়?
যদিও গ্রাম বাংলার ৫০ একর জমিতে নতুন প্রকল্প শুরু করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এতে হয়তো গ্রামাঞ্চলের কিছু মানুষ উপকৃত হবেন৷ কিন্তু শহরাঞ্চলে কাজ হারানো মানুষগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা নেবেন মুখ্যমন্ত্রী? মেলেনি তার সদুত্তর৷ বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার কর্মী কাজ হারিয়েছেন৷ কোথাও বা কাটা হচ্ছে বেতন৷ এঁদের কথা একবারও ভাবা হলো না৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আশার আলো খুঁজে পেলেন না বেকার সমাজ৷ করোমনা কাটিয়ে থমকে থাকা নিয়োগগুলি আদৌ শুরু হবে? হলে কবে? অধরা জবাব৷ কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলির জন্য এবারও জুটল সেই হতাশা৷ কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারই কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা এখনও ঘোষণা করেনি৷
করোনা পরবর্তী সময়ে উৎসব আসবে, তাই বোনাসও পাবেন সরকারি চাকুরিজীবীরা৷ আর বাকিরা? তারা হয়তো উৎসবের জোয়ারে না খেয়ে মরবে! বেকারত্বের যন্ত্রণায় আরও কতদিন কাঁদতে হবে দেশের যুবসমাজকে? অধরা জবাব৷