কলকাতা: জেলবন্দিরাও মানুষ, তাঁদেরও সমান সুযোগ সুবিধা প্রাপ্য। অথচ বহু ক্ষেত্রে জেল বা পুলিশ লকআপে মানবাধিকার রক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এবার সেই অভিযোগ তুলে সরব হলেন ভাঙড়ের বিধায়ক। মূলত লালবাজার সেন্ট্রাল লকআপের নানা অনিয়ম ও অমানবিক পরিস্থিত নিয়ে সরব হয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। সেখানে যারা রয়েছেন তাঁরা সকলেই যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তা নয়। বলা ভাল তাঁরা সবাই অভিযুক্ত। কেউ দোষী প্রমাণিত হবেন, কেউ আবার হবেন না। কিন্তু সেখানে যে অবস্থায় তাঁদের থাকতে হচ্ছে বলে দাবি করছেন নওশাদ, তা অত্যন্ত অমানবিক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। নওশাদের দাবি, সেখানে যাদের রাখা হয় তাঁদের একটা সামান্য হাফপ্যান্ট পরিয়ে রাখা হয়, যার কোনও বোতাম পর্যন্ত নেই। সেটি অত্যন্ত অপরিষ্কার। এছাড়া শৌচালয়ে শৌচকর্ম করতে গেলে সেই দরজায় ফুটো থাকে। তাতে বাইরে থেকে সবই দেখা যায় বলে দাবি করেছেন তিনি।
শৌচালয়ে সাবান পর্যন্ত নেই বলে জানিয়েছেন নওশাদ। এখানেই শেষ নয়, আইএসএফ বিধায়কের দাবি সকাল ন’টায় চারটি রুটি- সবজি এবং রাত ন’টার সময় আবার চারটি রুটি দেওয়া হচ্ছে। এর মাঝখানে কোনও খাবার দেওয়া হয় না সেন্ট্রাল লকআপে থাকা বন্দিদের। এর পাশাপাশি আরও অব্যবস্থার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। নওশাদের অভিযোগ সেখানে থাকা বন্দিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে তিনি বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বরাষ্ট্র দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অবিলম্বে যাতে পরিস্থিতির বদল হয় সেই দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনা হল এক শ্রেণির প্রভাবশালী জেলবন্দিরা রাজার হালে জেলে থাকেন বলে বিভিন্ন সূত্রে বহুবার খবর পাওয়া গিয়েছে। গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল আসানসোল জেলে থাকাকালীন যে সব খাবার দিনে বা রাতে খেতেন বলে শোনা যায়, তা বাড়িতে থেকেও বহু স্বচ্ছল পরিবারের মানুষের জোটে না। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে বন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বিশেষ গাড়িতে করে আদালতে কেন নিয়ে যাওয়া হয় তা নিয়ে কিছুদিন আগেই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা।
অথচ অন্যান্য বন্দিদের প্রিজন ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পার্থকে কেন বেশি সুবিধা দেওয়া হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর পাশাপাশি জেলের মধ্যে থেকে বহু দাগী অপরাধী অপরাধ জগৎকে মোবাইলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে বহুবার অভিযোগ উঠেছে। কীভাবে জেলের মধ্যে মোবাইল ফোন যাচ্ছে তা নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়, জেলের মধ্যে থাকা তথাকথিত প্রভাবশালী বন্দিদের জন্য বাইরে থেকে বিশেষ খাবার আনা হচ্ছে, এ কথাও বহুবার শোনা গিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন সময়ে জেলের ভিতর মাদকদ্রব্য ঢুকেছে বলেও শোনা গিয়েছে। তাই লালবাজার সেন্ট্রাল লকআপ বা রাজ্যের অন্যান্য জেল, অব্যবস্থার বহু অভিযোগ কিন্তু রয়েছে। যদিও প্রভাবশালী যোগ থাকলেই সংশ্লিষ্টকে বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে বলে শোনা যায়। আর এই বিষয়টি নিয়েই স্বরাষ্ট্র দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নওশাদ। ইতিমধ্যেই নওশাদের বিস্ফোরক মন্তব্য সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে৷ আইএসএফ বিধায়কের ভিডিও সামনে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক৷
এ বিষয়ে সাম্প্রতিককালে কোনও বিধায়ক তো দূরের কথা, কোনও সমাজকর্মী বা মানবাধিকার কর্মীকেও কিন্তু মুখ খুলতে দেখা যায়নি। তাই নওশাদের এই প্রচেষ্টা ব্যতিক্রমী বলেই মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল এবার কোনও পদক্ষেপ করে কিনা এখন সেটাই দেখার। যদিও, ভাঙড়ের বিধায়কের তোলা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেনি আজ বিকেল৷