তিয়াষা গুপ্ত: কলকাতার ব্রিগেড। বিভিন্ন সময় সাক্ষী থেকেছে বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরার। এই ব্রিগেডকে ঘিরে বারেবারে আবর্তিত হয়েছে জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতি। ১৯ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ। বিরোধী জেটের ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রায় সব বিজেপির বিরোধী দলের নেতা নেত্রীদের। কারা আসবেন, সেটা পরের কথা। অনেকেই এর মধ্যে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এদিন জোটের একটি জোরালো ফটোফিনিশ হবে না কিনা, তা সময়ই বলবে। তবে বিগ্রেড ও রাজনীতির চড়াই-উতরাই, বারেবারে সমার্থক হয়ে উঠেছে।
জাতীয় স্তরে বিরোধীদের জোট তুলে ধরতে ব্রিগেড প্যারেড ময়দান অতীতে ইতিহাস তৈরি করেছিল। আজও যা আলোচ্য। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং তখন কংগ্রেস ভেঙে জনমোর্চা তৈরি করে রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের এক মঞ্চে আনার প্রধান কারিগর হয়ে উঠেছেন। লালুপ্রসাদ যাদবের পরামর্শে জ্যোতি বসু বিরোধী নেতাদের নিয়ে ১৯৮৮ সালের ২ জুলাই ব্রিগেডে ভিপি সিংকে সম্বর্ধনা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেই মঞ্চে ছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীও। বিশাল জমায়েতে ভিপিকে মাঝখানে রেখে হাতে হাত রেখে জোট গড়েছিলেন জ্যোতি বসু ও বাজপেয়ী। দেশের রাজনৈতিক অ্যালবামে হাজার ছবির ভিড়ে এই মুহূর্ত হারিয়ে যায়নি। স্থান সেই ব্রিগেড, যাকে কেন্দ্র করে সেদিন তৈরি হয়েছিল ইতিহাস।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারেবারে ব্রিগেডে সভা করেছেন, ব্রিগেড ভরিয়েছেন। বামেদেরও এমন ইতিহাস আছে। মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূলনেত্রী হওয়ার আগে যুব কংগ্রেস সভানেত্রী থাকাকালীন একার চেষ্টায় ব্রিগেডে সিপিএম বিরোধী সভা করে নজর করেছিলেন তিনি। আজ জাতীয় রাজনীতিতে তিনি এক উল্লখযোগ্য নাম। এই জায়গায় আসতে ব্রিগেডের জনসভা বারেবারে তাঁর উত্থানের পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ তাদের ২৭ নভেম্বর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেয়। তাতে ৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড চলার ডাক দেওয়া হয়েছে। অতীতে ব্রিগেডে জনপ্লাবনের মধ্যে সুর চড়িয়েছেন একের পর এক বাম নেতারা। এখন তাদের পালে ভাটার টান। এই অবস্থায় ব্রিগেডকে কেন্দ্র করে লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, তা বলাই যায়। আগে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, দেওয়াল লিখনে ব্রেগেড চলার ডাক দেওয়া হত। এখন সিপিএমও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ব্রিগেডের ডাক দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে বামেদের হটানো অসম্ভব। এই মিথ ভেঙে মমতা বন্দ্যোপাধ্যয় রাইটার্সে পা রেখেছিলেন। ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। এবার ব্রিগেডে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মহাসমাবেশ হতে চলেছে। শোনা যাচ্ছে, সেখানে বামাদেরও ব্রাত্য রাখছেন না তিনি। তবে বামেরা এই সভায় আসবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
মায়াবতী-অখিলেশ উত্তর প্রদেশে জোট করেছেন। তাঁদের জোটকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মমতা। এরপরেই অখিলেশ মমতাকে ফোন করে জানান তিনি ব্রিগেডের সমাবেশে আসছেন। যতদূর শোনা যাচ্ছে, কেসিআর, চন্দ্রবাবু নায়ডু থাকবেন। তবে সোনিয়া বা রাহুল থাকবেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী শক্তির হাত মজবুত করতে উল্লখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট আসন্ন। ফেডারেল ফ্রন্ট বা মহাগটবন্ধন-মমতা কোনদিকে থাকবেন, তা সময়ই বলবে। তবে ব্রিগেডকে কেন্দ্র করে মমতার রাজনৈতিক কৌশল কতটা গতি পায়, সেই দিকে নজর থাকবে দেশবাসীর।