নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলায় এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সাধারণত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল নিজেদের ঐক্যবদ্ধ দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বঙ্গ বিজেপিতে গোষ্ঠীকোন্দল যে কোন আকার নিয়েছে সেটা বেআব্রু হয়ে গেল নাড্ডার সফরের মধ্যেই। নাড্ডার নেতৃত্বে হওয়া কোর কমিটির বৈঠক এড়ালেন শুভেন্দু অধিকারী। আর বিজেপি সভাপতির সফরের মধ্যেই একাধিক জায়গায় বিজেপির জেলা সভাপতি বদল করতে হবে, এই দাবিতে বিক্ষোভ চলল। এই আবহের মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে নাড্ডার উপস্থিতিতে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে গোটা বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে।
শনিবার পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপি সভাপতি। সেখানে সংগঠনকে কীভাবে আরও মজবুত করা যাবে, লোকসভা নির্বাচনে কীভাবে দলকে এগোতে হবে, এই সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন নাড্ডা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে নাড্ডার উপস্থিতিতে শুভেন্দু সেখানে উপস্থিত বিজেপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন,”আগে নিজের এলাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী করুন। তারপর মঞ্চে উঠে ভাষণ দেবেন।” সেই সঙ্গে শুভেন্দু বলেন, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে ১৭ টির মধ্যে ১১টি পঞ্চায়েতে বিজেপি জিতেছে এবং গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৮৪টি পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করেছে। এভাবেই শুভেন্দু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তিনি সফল, আর অন্যরা ব্যর্থ। প্রশ্ন উঠছে নাম না করে কাদের উদ্দেশে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি? রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের উদ্দেশেই শুভেন্দু এ কথা বলেছেন।
ঘটনা হল রাজ্য বিজেপির তিন প্রধান মাথা শুভেন্দু, সুকান্ত এবং দিলীপ কোনও দিনই এক সঙ্গে পথ চলতে পারেননি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিলীপের লোকসভা এবং সুকান্তের লোকসভা এলাকায় বিজেপির ফল একেবারেই ভাল হয়নি। এই দুই নেতার জেলা অর্থাৎ পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে বিজেপির ফল প্রত্যাশার ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি। সেই জায়গা থেকে শুভেন্দুর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির ফল অনেকটাই ভাল হয়েছে। আর সেই বিষয়টি নিয়ে সুকান্ত-দিলীপকে কটাক্ষ করে শুভেন্দুর এমন মন্তব্য বলেই মনে করা হচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়, সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তারপরে নাড্ডার নেতৃত্বে কোর কমিটির বৈঠকে হাজির ছিলেন না শুভেন্দু। কিন্তু সেই বৈঠকে দিলীপ উপস্থিত ছিলেন। নাড্ডার উপস্থিতিতে কোর কমিটির বৈঠকে হাজির না থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও কি কোনও বার্তা দিতে চাইলেন শুভেন্দু? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট রাজ্য বিজেপির প্রধান নেতাদের মধ্যে একেবারেই তাল মিল নেই। যতদিন যাচ্ছে ততই তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিচ্ছে। যদিও রাজ্য বিজেপির দাবি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে বিজেপির প্রত্যাশিত ফল হয়নি। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ মহলের পাল্টা যুক্তি, তাহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরে তুলনামূলকভাবে বিজেপির ভাল ফল কি করে হল? তাঁদের স্পষ্ট কথা, শুভেন্দু পেরেছেন, কিন্তু অন্যরা পারেননি। আর সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠানে সেই কথাটাই স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। সর্বভারতীয় সভাপতির উপস্থিতিতে এভাবেই দলের বিপক্ষ গোষ্ঠীকে নিশানা করে শুভেন্দু বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন রাজ্য বিজেপিতে তিনিই প্রধান সাংগঠনিক নেতা। অর্থাৎ কে যোগ্য, আর কারা অযোগ্য, সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপিকে এক সূত্রে বাঁধতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি পরিকল্পনা করেন এখন সেটাই দেখার।