nabanna
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য-রাজ্যপালের দ্বন্দ্ব কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। একের পর এক ঘটনায় দ্বন্দ্ব যেন বেড়েই চলেছে। বিগত কয়েক মাস ধরে উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে সেই দ্বন্দ্ব অন্য মাত্রা পেয়েছে। আর উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে যখন নবান্ন-রাজভবনের বিরোধ যখন তুঙ্গে, তখন শারদ সম্মান প্রদান নিয়েও বিতর্ক উস্কে দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
রাজভবন-নবান্নের দ্বৈরথ এবার অন্য মাত্রা পেল। এবার দুর্গাপুজো নিয়েও মমতা-রাজ্যপালের লড়াই! সেটাই দেখতে চলেছে রাজ্যবাসী। দুর্গাপুজোর সময় ‘বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান’ দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার বাংলার রাজ্যপালও দেবেন ‘দুর্গা ভারত’ সম্মান। গোটা দেশের যে কোনও রাজ্যের কৃতীরা এই সম্মান পেতে পারেন। শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান থেকে শুরু করে গবেষণা, তথ্য-প্রযুক্তি, সমাজসেবা, বাণিজ্য, চিকিৎসা, যে কোনও ধরনের শিল্প এবং আর বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতীরা এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে নবান্ন-রাজভবনের দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই ইস্যুতে রাজ্যপালকে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন। পাল্টা রাজ্যপাল শিক্ষামন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, তিনি এই সমস্ত বক্তব্যের জবাব দিতে চান না। যদি কিছু বলার থাকে তা তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বলবেন, তাঁর অধঃস্তন কাউকে নয়। এছাড়া রাজ্যপালের মধ্যরাতে নবান্ন ও কেন্দ্রকে দুটি চিঠি দেওয়া নিয়েও বিস্তর চর্চা হয় রাজ্য রাজনীতিতে। এখানেই শেষ নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও রাজভবন-নবান্নের বিরোধ চরমে ওঠে। নবান্নের অভিযোগ, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে রাজ্যপাল সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন। এই পরিস্থিতিতে পুজোয় ‘দুর্গা ভারত’ সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করল রাজভবন।
তাই প্রশ্ন, এভাবে আর্থিক খরচ কেন বাড়াচ্ছে রাজভবন? রাজভবনের কর্মীদের বেতন থেকে শুরু করে অন্যান্য যাবতীয় খরচ রাজ্য সরকার দিকে থাকে। সেই জায়গা থেকে অযথা রাজভবন খরচ কেন বাড়াচ্ছে তা দিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে রাজভবনের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল,”রাজভবনের যারা কর্মী তাঁদের বেতন রাজ্য সরকারই দেয়। কখনও কখনও বাইরে থেকে লোকজন ডেকে এনে, হয়ত অন্য রাজ্যের কোনও প্রাক্তন ডিজিকে ডেকে এনে অনুষ্ঠান হচ্ছে। যা ইচ্ছে করছে, অকাজের কাজ বেশি হচ্ছে। এই যে মাঝেমধ্যে চা খাওয়ানো হয়, সেই টাকা কে দেয়? রাজ্যই তো দেয়। সব বন্ধ হয়ে যাবে!” উল্লেখ্য উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী আর্থিক অবরোধের হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এমন প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যজুড়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল যেভাবে দুর্গা সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তাতে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে যে, রাজ্যপাল খরচ কেন বাড়াচ্ছেন? কিছুদিন আগেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তাঁর বিদেশ সফর বাতিল করেছেন। সেই জায়গা থেকে নতুন করে পুরস্কার চালু করা হচ্ছে কেন? এই প্রশ্ন তো উঠবেই। তাই রাজভবনের এই ঘোষণায় নতুন করে নবান্নের সঙ্গে যে বিরোধ আরও বাড়ল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।