কলকাতা: ভোটের উত্তাপে বাংলায় যেমন বাড়ছে দল পরিবর্তনের ট্রেন্ড, তেমনিই গড়ে উঠছে নতুন দল। আর বর্তমান রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির নতুন দলগঠন। সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের নতুন দল ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ গঠনের কথা জানান আব্বাস সিদ্দিকি। কিন্তু, এখন প্রশ্ন উঠছে, আব্বাস সিদ্দিকি’র নতুন দলের ভবিষ্যৎ কী?
ইতিমধ্যে আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা। আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাতে এসেছেন মিম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি৷ এসেছেন কংগ্রেস নেতা সৌমেন মিত্র’র ছেলে রোহান৷ এসেছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও। আব্বাসের দলকে জোটে টানার কথাও শোনা গেছে বামফ্রন্ট তরফে। তবে কোনোকিছুই পরিষ্কার হয়নি, অথচ নির্বাচনের ঠিক দু’মাস আগেই নিজের দলের ঘোষণা করলেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি।
আব্বাস সিদ্দিকি’র নতুন দলের ঘোষণার পরেই তার প্রতি কটাক্ষের বাণী উঠে আসে তৃণমূল ও বিজেপির তরফ থেকে। তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে মুসলিম ধর্মীয় দলগুলি ভোট কেটে একাধারে বিজেপিকে জিততে সাহায্য করেছে। বাংলায় আব্বাসের দলও একই উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নামছে, কিন্তু এতে বিশেষ কিছু সুবিধা করতে পারবে না পীরজাদা৷” এই বিষয়ে কটাক্ষের সুরে বিজেপি নেতা শমিক ভট্টাচার্য বলেছেন, “আব্বাসের নতুন দল বাংলার ভোটে প্রভাব ফেলতে পারবে না। বাংলা তার দলকে প্রত্যাখ্যান করবে৷” এদিকে ভাইপোর দলগঠনকে কেন্দ্র করে আব্বাস সিদ্দিকীর কাকা ত্বহা সিদ্দিকী নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, “এই দলটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। যে ছেলেরা এখন হইহই করছে, দুদিন পর নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তারা আবার চুপচাপ হয়ে যাবে৷”
সংখ্যার নিরিখে বাংলায় মুসলিম ভোট মোট ভোটের প্রায় ৩০%, যা গত ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ঝুলিতেই গেছে। এদিকে বাংলায় মুসলিম দলের লড়াইয়ের ইতিহাস ঘাঁটলে বিশেষ কিছু প্রভাব লক্ষ্য করা যায়না। ১৯৭০ সালে মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় ‘মুসলিম লুগ’ দলের বিধায়ক থাকলেও পরে তার অস্তিত্ব মেলেনি তেমন। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর ‘পিপিলস ডেমোক্র্যাটিক কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া’ দল রাজনীতির ময়দানে এলেও পরে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী নিজেই তৃণমূলে চলে আসেন। তাছাড়া মুর্শিদাবাদে ‘ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া’ এবং ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব ইন্ডিয়া’ নামে দুটি মুসলিম দল গঠিত হলেও পরে তা হারিয়ে যায়।
বর্তমানে এই নতুন দলের জল্পনার মাঝেই ধর্মনিরপেক্ষতা ইস্যুতে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী জানান, “সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলা করবে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি। এর ইতিহাস রয়েছে ভারতবর্ষে, যেখানে বিজেপির মত সাম্প্রদায়িক দলকে রুখতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস। ভবিষ্যতেও এর অন্যথা হবে না৷” তবে সবকিছুর মাঝে একটাই প্রশ্ন, “বাংলায় মুসলিম দল কি আদেও গুরুত্ব পাবে? নাকি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে সেই হারিয়েই যাবে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান?” উত্তরটা হয়তো পাওয়া যাবে নির্বাচন পরবর্তী বাংলার পটচিত্রে।