নিজস্ব প্রতিনিধি: অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে জবাবী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর প্রতি ‘সমবেদনা’ প্রকাশ করেছেন, তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। অধীর কংগ্রেসের দলনেতা হলেও বক্তার তালিকায় কংগ্রেস কেন তাঁকে রাখেনি, এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘ইন্ডিয়া’ জোটে ভাঙন ধরাতে চেয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, কলকাতার ফোনই কি অনাস্থা প্রস্তাবে বলার সুযোগ দেয়নি অধীরবাবুকে?
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী বলতে চেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্ভবত ফোন করে কংগ্রেসকে বলেছেন যাতে অধীর চৌধুরীকে বক্তার তালিকায় রাখা না হয়। কারণ রাজ্য রাজনীতিতে অধীর সবসময় মমতার প্রবল বিরোধী বলেই পরিচিত। যদিও প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে আপত্তিকর শব্দ বলার অভিযোগ এনে অধীর চৌধুরীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লোকসভা থেকে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার ওম বিড়লা। এই ইস্যুতে অধীরের পাশে দাঁড়িয়ে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে একটাই প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী একথা কেন বললেন? উত্তর একটাই, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএম প্রত্যাশিত ভাবেই সমান ভাবে বিজেপি ও তৃণমূলের প্রবল বিরোধিতা করে চলেছে। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতার কারণেই কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূল এক মঞ্চে রয়েছে বিজেপিকে হটানোর জন্য। সেই জায়গা থেকে বিজেপি চায় পশ্চিমবঙ্গে কোনও ভাবেই যেন তাদের একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের মুখে না পড়তে হয়। কারণ কংগ্রেস, তৃণমূল এবং সিপিএম জোট করে না লড়লে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট কিছুটা হলেও ভাগ হয়ে যাবে বলে মনে করে বিজেপি। তাতে সুবিধা হবে গেরুয়া শিবিরের। কারণ এই তিনটি দল সংখ্যালঘু ভোটের উপর অনেকটাই নির্ভর করে থাকে। তাই বিজেপি চায় সেই ভোট একতরফাভাবে যেন কোনও একটি বিশেষ দলের দিকে না যায়। তাতে হিন্দু ভোটকে হাতিয়ার করে বিজেপি যে ৩৫টি আসনে জেতার টার্গেট নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে, তার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকবে বলে আশা গেরুয়া শিবিরের। শুধুমাত্র সেই লক্ষ্যেই অধীরের প্রতি কপট সহানুভূতি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন কথা বলেছেন বলে রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত।
কিন্তু সত্যিই কি এতে বিজেপির লাভ হবে? গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮টি আসনে জিতে বিজেপি রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয়। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পর থেকে বিজেপির ক্রমশ শক্তিক্ষয় হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও আশানুরূপ ফল হয়নি তাদের। অথচ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলা থেকে বিজেপিকে ৩৫টি আসনে জেতার লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে পৌঁছনো যে এখন বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়, সেটা সকলেই জানে। এই আবহের মধ্যে সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠিত হয়েছে। যা নিশ্চিত ভাবে চাপে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। তাই সব কিছু ভেবেচিন্তেই সংসদে দীর্ঘ ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে অধীর চৌধুরীকে এভাবে কটাক্ষ করেছেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। এই কৌশল ভোটবাক্সে কতটা প্রতিফলিত হবে এখন সেটাই দেখার।