নাগরিকত্ব আইন থেকে ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা’ , মমতার প্রশ্নে জবাব মোদির

নাগরিকত্ব আইন থেকে ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা’ , মমতার প্রশ্নে জবাব মোদির

কলকাতা: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিল করা এবং রাজ্যের আর্থিক দাবি দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।একদিন পরে এ ব্যপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।বেলুড় মঠ এবং নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে বিষয় ধরে ধরে মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত প্রশ্ন ও সমালোচনার জবাব দিয়েছেন তিনি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু করার পর আর কোন ভাবে যে পিছিয়ে আসা হবেনা সেকথা স্পষ্ট করে দেওয়ার পাশাপাশি সবরকমের সহায়তা থেকে যে রাজ্যকে কোনভাবেই বঞ্চিত করা হচ্ছে না বা হবেনা সে বার্তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মোদী। উল্টে রাজ্য সরকারের দোষেই এরাজ্যের মানুষ     আয়ুষ্মান ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধির মতো দুই গরীব বান্ধব প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। 

বেলুড় মঠের অনুষ্ঠানে সিএএ নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।   শনিবার রাতে তিনি রাত কাটান বেলড়মঠে। রবিবার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মতিথিতে দেশের যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বেলুড়মঠ থেকেই বক্তব্য রাখেন তিনি। সেখানে সিএএ নিয়ে দেশের যুব সমাজকে ভুল না বোঝার আহ্বান জানান । প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশে সিএএ নিয়ে যুব সমাজের মনের মধ্যে অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ভরে দিয়েছে কয়েকজন মানুষ। দেশের যুবসমাজের অনেকেই সিএএ নিয়ে ভ্রমের শিকার হয়েছে। তবে তাদের সেই সন্দেহকে দূর করে এই আইন নিয়ে স্পষ্ট একটি ধারণা তুলে ধরতে হবে।’
আর নেতাজী ইন্ডোরে বন্দরের দেড়শ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চকে মোদী বেছে নেন মমতার ‘বঞ্চনা’র অভিযোগের জবাব দিতে।আয়ুষ্মান ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের প্রসঙ্গ তুলে  এরাজ্যে তা চালু না হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী এদিন নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে আক্রমন শানান।নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চ থেকে নাম না করে তিনি মমতাকে কটাক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রী  বলেন,  ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে সারাদেশে ৭৫ লক্ষ গরিব মানুষকে  বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পে ৮কোটি কৃষককে সরাসরি তাদের ব্যাংক একাউন্টে ৪৩ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।এই রাজ্য ওই দুই প্রকল্পে যোগ দিলে এখানকার গরিব মানুষ এই সুযোগ পাবেন।তবে রাজ্য সরকার আয়ুষ্মান ভারতের স্বীকৃতি দেবে কিনা জানি না। যদি দেয়, তাহলে এই প্রকল্পে অনেক গরিব মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। যাঁদের অর্থ নেই, তাঁরাই সুবিধে পাবেন। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি এইসব নীতি নির্ধারকদের সৎ বুদ্ধি দিন।’ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কে নাম না করে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘এই প্রকল্পে কোনো সিন্ডিকেট তোলাবাজি সুযোগ নেই তাই এখানে এইসব প্রকল্প লাগু করা হচ্ছে না।’ প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করায় হর্ষধ্বনিতে মুখোরিত হয়ে ওঠে কানায় কানায় ভরা স্টেডিয়াম। একই সঙ্গে রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া টাকার প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, রাজ্যের   উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার সব রকম সহায়তা করছে।পশ্চিমবঙ্গের বিকাশের জন্য কেন্দ্র সবসময় চেষ্টা করছে।
উজ্জ্বলা যোজনার কথাও তুলে ধরেন মোদী। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের আওতায় এই রাজ্যে ৯০ লাখ মানুষকে গ্যাস কানেকশন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ লাখ মানুষ পিছিয়ে পড়া, গরিব মানুষ।”
মোদীর এদিনের আক্রমণের পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে,বিগত লোকসভা ভোটের আগেও এই সিন্ডিকেট ও কাটমানি প্রসঙ্গ তুলে এনে তৃণমূলকে নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একই সুর শোনা গিয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও বিজেপির অন্যান্য নেতাদের মুখে। সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে এইসব অভিযোগ করেছিলেন মোদী। লোকসভায় তার ফলও মিলেছিল কিছুটা। বর্তমানে নাগরিকত্ব আইন ও এনারসি বিরোধী বিক্ষোভে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরোধিতায় সামনের সারিতে রয়েছে তৃণমূল। তাই ফের সিন্ডিকেট, কাটমানি প্রভৃতি প্রসঙ্গ তুলে এনে তৃণমূলকে চাপে রাখার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five − three =