কলকাতা: একদিনে করোনা সংক্রমণের নিরিখে নতুন রেকর্ড তৈরি হল রাজ্যে। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে নতুন এক ডজন করোনা সংক্রমণ সামনে এসেছে।এদের মধ্যে রয়েছেন হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপারও। তবে আশার আলো জাগিয়ে রেখে সুস্থও হয়েছেন নতুন তিন রোগী। মৃতের সংখ্যাও নতুন করে বাড়েনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নবান্নে জানিয়েছেন ‘গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১২ জন নভেল করনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই রোগে মৃতের সংখ্যা ৫ই রয়েছে।’ নবান্নে এদিন বিভিন্ন বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তেহট্টের যে পরিবারের একসঙ্গে পাঁচ জনের করোনা ধরা পড়েছিল, সেই পরিবারের একটি শিশুর দেহে এখনও সংক্রমণ রয়েছে। সেই কারণে তার মা সেরে উঠলেও তিনি এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। বাচ্চার সঙ্গেই রয়েছেন হাসপাতালে।
যদিও রাজ্যের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরাকরের দেওয়া তথ্যে এখনও গড়মিল রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে এরাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৩ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ১০৩ জনের মধ্যে ১৬ জনকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। মারা গিয়েছেন পাঁচ জন। অর্থাৎ তাদের হিসেব মতো বাংলায় এখনও ৮২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অ্যাকটিভ রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন শিল্প জগতের প্রতিনিধিদের জানান করোনা মোকাবিলায় সরকার সবরকম চেষ্টা করছে। উপস্থিত বণিকসভার প্রতিনিধিরাও তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন রাজ্য সরকারি ৫৬২টি কোয়ারেন্টিন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ওই সমস্ত সরকারি কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে ৫১৮৮ জন ছাড়া পেয়েছেন, এখনও রয়েছেন ৪৭১৭ জন। সারা রাজ্যে ৬১টি করোনা হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান মমতা।রাজ্যে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১৮৮৬টি করোনা পরীক্ষা হয়েছে। এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮০ জন। এখন পর্য়ন্ত রাজ্যে করোনা আক্রান্ত মূলত ১১টি পরিবারের সদস্যরা।
বৈঠকে তিনি ঘোষণা করেন বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য লাইসেন্স পুনর্নবীকরণে বিশেষ ছাড় দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ব্যবসায়ীদের লাইনসেন্স পুনর্নবীকরণের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি আগামীকাল সুস্থ হয়ে ওঠা আরও তিনজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও জরুরী পরিষেবাগুলিতে চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু কল কারখানা খোলার ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা চলেছে।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের হটস্পট খুঁজতে রাজ্য সরকার সন্ধানী বলে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে বলে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন আশা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে। তা সরাসরি নবান্নে কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংরক্ষিত হবে। করোনা মোকাবিলায় এবার ডেটা অ্যানালিসিস সেল তৈরি করল রাজ্যসরকার। ৯ সদস্য নিয়ে তৈরি এই কমিটি। কলকাতা সহ জেলাগুলি থেকে ডেটা কালেক্ট করবে এই কমিটি। সেই ডেটা অ্যানালিসিস বা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে রাজ্য সরকার। ডেপুটি ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস ডাঃ অসিত বিশ্বাস–এর নেতৃত্বে কাজ করবে এই কমিটি।
জানা গিয়েছে, খুব দ্রুত কাজ শুরু করবে এই কমিটি। কলকাতা সহ জেলাস্তর থেকে বিভিন্ন সোর্স মারফত কালেক্ট করা হবে ডেটা। এরপরে সেই ডেটা নিয়ে অ্যানালিসিস চলবে। এই সমস্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই কোভিড–১৯ -এর হটস্পট চিহ্নিত করা হবে। সেই অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে রাজ্য সরকার। প্রত্যেকদিন যা যা তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে, সেগুলি বুলেটিন আকারে পেশ করা হবে। সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া হবে তাও জানানো হবে বুলেটিনে।