কলকাতা: টকটকে গোলাপী রঙের পাঞ্জাবি। বিধানসভায় হারিয়ে যাওয়া টাকার বান্ডিল উদ্ধার করতে এটাই সম্বল ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়ারির বিধায়ক পরেশ মুর্মুর। প্রায় এক মাস আগে বিধানসভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সেই পাঞ্জাবি পড়ে এসেছিলেন পরেশবাবু। আসার পথে ব্যাঙ্ক থেকে বান্ডিলে মোট ৩০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখেন পাঞ্জাবির পকেট ভোঁ ভাঁ। কখন যে টাকার বান্ডিলটা পকেট থেকে পড়ে গেছে টেরই পাননি তিনি। কোথায় পড়েছে তাও ঠাহর করতে পারেননি তিনি।
অবশেষে দিন কতক পড়ে বিধানসভা থেকে ফোন আসে পরেশবাবুর কাছে। “আপনার কিছু হারিয়ে গিয়ে থাকলে তা উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে সংগ্রহ করুন,” ফোনে এই কথা শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি। আসলে গত ৬ জানুয়ারি, বিধানসভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ৩০ হাজার টাকার বান্ডিলটা পড়ে যায় পরেশবাবুর। বিধানসভায় সরকারের পক্ষের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের দফতরের এক কর্মী বিধানসভার লবিতে গাড়ি বারান্দার ঠিক কাছে পড়ে থাকা টাকার বান্ডিলটা দেখতে পায়। সেটা সংগ্রহ করে নিয়ে সোজা সচিবালয়ে গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সচিব অভিজিৎ সোমকে জানায় ওই কর্মী। দিন কয়েক অপেক্ষা করেও যখন কেউ ওই টাকার দাবি করতে আসে না তখন মালিকের খোঁজ করতে তদন্তে নামেন বিধানসভা কর্তৃপক্ষ।
বিধানসভার সিসিটিভি ক্যামেরায় গোলাপি পাঞ্জাবি পরা পরেশবাবুর পকেট থেকেই ওই টাকা পড়তে দেখা যায়। ব্যাস, ফোন যায় তার কাছে। কিছু হারিয়ে থাকলে উপযুক্ত প্রমাণসহ সংগ্রহ করতে বলা হয়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া জিনিসের ব্যাপারে কিছু জানানো হয় না। এদিকে কী প্রমাণ দেবেন টাকার সেই নিয়ে চিন্তায় পরেশবাবু। বিধানসভা থেকে জানানো হয় সেদিন যা পরে এসেছিলেন তা পরে এলেই চলবে। সেইমতো গোলাপি রঙের পাঞ্জাবিটার সঙ্গে নেভি ব্লু রঙের জহর কোট পরে বিধানসভায় আসেন তিনি। অবশ্য আরও একটা প্রমাণ ছিল পরেশবাবুর কাছে। ব্যাঙ্ক থেকে ওই টাকা তোলার রশিদ ছিল তার কাছে। টাকা হাতে পেয়ে আপ্লুত পরেশবাবু জানান, “গাড়ির মাসিক কিস্তি মেটাতে ওই টাকা তুলেছিলাম। হারিয়ে যাওয়ায় মনটা খুব খারাপ ছিল। কিন্তু বিধানসভার ওই কর্মীর সততায় আমি মুগ্ধ। তাকে মিষ্টি খেতে ১০০০ টাকা দিয়েছি।”