কলকাতা: আদতে নকশালপন্থী, সেখান থেকে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যসভার সাংসদ। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেডে যোগ, অর্থাৎ গেরুয়া হলেন বাংলার আইকন, মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী। কিন্তু বিজেপি মূলত যে বিষয় নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে আওয়াজ তুলে যাচ্ছে, সেই চিটফান্ড কেলেঙ্কারি তথা দুর্নীতির সঙ্গে যোগ ছিল বাঙালি আইকনের! আজ তাহলে কি সেই ইতিহাস ভুলে গিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি শিবির? মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে উন্মাদনার মধ্যেও যেন খোঁচা দিচ্ছে এই প্রশ্ন।
সারদা, রোজভ্যালি থেকে শুরু করে অ্যালকেমিস্ট, সবকিছুতেই নাম জড়িয়েছে বাংলার বড় বড় স্বনামধন্য ব্যক্তিদের, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা এবং সদস্যদের। তাদের মধ্যে অন্যতম বড় নাম ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর। সারদা মামলায় নাম জড়ানোর পর মিঠুন চক্রবর্তী তদন্তকারী সংস্থার হাতে চেকের মাধ্যমে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ানো থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে ছিলেন অভিনেতা তথা তৎকালীন তৃণমূল রাজ্যসভার সাংসদ। অ্যালকেমিস্ট দুর্নীতির সঙ্গেও নাম জড়িয়ে যায় মিঠুন চক্রবর্তীর। কারণ কেডি সিংয়ের এই সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার ছিলেন অভিনেতা। সেই প্রেক্ষিতে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। এইভাবে দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য পদ ছেড়ে দেন মিঠুন চক্রবর্তী, তাও মেয়াদ শেষের বেশ খানিকটা আগেই। তারপরে বেশ কিছু সময় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান বাংলার মহাগুরু। কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না যে তিনি আদৌ রাজনীতিতে ফিরবেন কিনা, বা পুরনো দলে যোগ দেবেন কিনা। কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে পুনরায় এত আলোচনা শুরু হয়নি। কিন্তু হঠাৎ একদিন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করার ছবি সামনে আসতেই মিঠুন চক্রবর্তীর বিজেপি যোগের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে যায় অদ্ভুত ভাবেই। তারপরের কয়েকটা দিন যা ঘটেছে তা সকলেরই জানা। আজ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি শিবিরের ব্রিগেডের মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন বাংলার আইকন।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের অন্দরে বিদ্রোহের মাঝেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল কংগ্রেসও, দেখুন বিস্তারিত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর অভিযোগ তুলেছেন যে বিজেপি হচ্ছে ওয়াশিং মেশিন, কালো গেলে সাদা হয়ে বেরোনো যায়। সেই প্রেক্ষিতে দেখা গিয়েছে একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং দুর্নীতি মামলায় যাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপি, তারাই এখন বেশিরভাগ বিজেপি শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। তাদের নিয়েই বিজেপির প্রচার করছে, এবং স্বাভাবিকভাবে আগামী দিনে হয়তো প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে তাদের কয়েকজনকে। এই প্রেক্ষিতে তাহলে কি মিঠুন চক্রবর্তীও সেই দলে শামিল হলেন, প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেসে থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ব্যাপক প্রশংসা করেছেন তিনি, বাংলার প্রত্যেকটি মানুষ তাঁর বক্তব্য এখনো মনে রেখেছে। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়ে যাবার পরে যিনি অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন, তিনি এখন হঠাৎ আবার রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভাব ঘটালেন তাও একেবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী বিজেপি শিবিরের পাশে দাঁড়িয়ে। অবশ্যই এখানে ঠিক কি প্রেক্ষিতে ‘খেলা হল’, তা নিয়ে চর্চা হতেই হবে।