সুন্দরবন: ২২ বছরের যুবকের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল ১৫ বছরের নাবালিকার। ইচ্ছের বিরুদ্ধেই নাবালিকার বিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু সাহস সঞ্চয় করে নিজেই সেই বিয়ে রুখল নাবালিকাটি। এই ঘটনা বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সাহেবখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের দেউলি গ্রামের।
পাত্রীর বাড়ি সন্দেশখালি ব্লকের দক্ষিণ হাটগাছি গ্রামে। তার বিয়ে স্থির হয় হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দেউলি গ্রামের বছর ২২-এর যুবক সমরেশ মন্ডলের সঙ্গে। নাবালিকাকে নিয়ে ও তার বাবা-মা পাত্রের বাড়ি হাজির হয়ে যান সকাল সকাল। প্যান্ডেল বাঁধা, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থার প্রস্তুতি সব শেষ। সোমবার হয়ে গেছে গায়ে হলুদের পর্বও। কিন্তু এত কিছুর পরেও বিয়ে হল না। বাদ সাধল স্বয়ং ‘পাত্রী’। রবিবার সন্ধেয় চাইল্ড লাইনের টোল ফ্রি নাম্বার ১৪৭৪-এ ফোন করে সে জানায়, বিয়ে নয়, পড়াশোনা করতে চায় পুরো সে। চাইল্ড লাইনের সদস্য শফিকুল ইসলাম নাবালিকার পুরো ঠিকানা নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের জানান।
আজ সোমবার সকালে হিঙ্গলগঞ্জ থানার পুলিশ, বিডিওর প্রতিনিধি চাইল্ড লাইনের সদস্যরা সটান হাজির হন দেউলি গ্রামে পাত্রের বাড়ি। প্রথমে নাবালিকার বাবা রামকৃষ্ণ মৃধা এবং মা অনিতা মৃধা বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হননি। পুলিশ এবং চাইল্ড লাইনের আধিকারিকরা তাদের বোঝান যে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া সামাজিক অপরাধ। বিডিও প্রতিনিধিরা এও জানতে চান, রাজ্য সরকার যেখানে কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মত প্রকল্প এনে মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সেখানে কেন বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতেও মানতে চাইছিলেন না নাবালিকার বাবা-মা। শেষে পাত্রী নিজে জানিয়ে দেয়, পড়াশোনা না করে সে বিয়ে করতে চায় না। এরপর বাবা-মা মুচলেকা দিয়ে জানান, পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না তাঁরা।
সন্দেশখালির লক্ষ্মীকান্তপুর পূর্ণচন্দ্র পুর কানমারী শিক্ষা নিকেতনের দশম শ্রেণির ছাত্রী ওই নাবালিকা। সে চায় আরও পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তার এই সাহসী পদক্ষেপে দারুণ খুশি তার সহপাঠীরা। এই ঘটনা যে গ্রাম বাংলার মেয়েদের সাহসী করে তুলবে তেমনটাই আশা করছেন পুলিশ এবং প্রশাসনের আধিকারিকরা।