নিজস্ব প্রতিনিধি: যত কাণ্ড সিসিটিভি বসানো নিয়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘটে চলা লাগাতার অনিয়ম ও অসভ্যতা বন্ধ করার অন্যতম প্রধান দাওয়াই সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, এমনটাই মনে করে ওয়াকিবহাল বহল। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের একাংশেল প্রবল বাধার কারণে, আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যদিও বছর দশেক আগে সেই চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। তখন বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ করার জন্য অভিজিৎ চক্রবর্তী সেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শোনা যায় সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মদ-গাঁজার আসর অনেকটাই কমে গিয়েছিল। হস্টেলে প্রতি মাসে দু’বার করে গিয়ে ভিজিট করতেন তিনি। বহিরাগতদের চলে যেতে বাধ্য করতেন। এখানেই শেষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থাকা প্রচুর গাছের গুঁড়ি কেটে ট্রাকে করে পাচার হতো বলেও অভিযোগ ছিল। এই সমস্ত অন্যায় বন্ধ করতে পেরেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য। যদিও পরবর্তীকালে সুরঞ্জন দাস উপাচার্য হয়ে আসার পর সিসিটিভি খুলে নেওয়া হয়েছিল বলে সম্প্রতি দাবি করেছেন অভিজিৎ চক্রবর্তী। তাই প্রশ্ন, কেন সিসিটিভি খোলা হয়েছিল? কাদের চাপে কর্তৃপক্ষ এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন? ঘটনা হল যাদবপুরের পড়ুয়াদের প্রবল চাপের কাছে মাথা নত করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। এই পরিস্থিতিতে প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় সিসিটিভি বসানোর বিষয়টি নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে চরম অরাজকতা চলবে, নেশার আসর বসবে, বছরের পর বছর ধরে র্যাগিং হবে, অথচ সিসিটিভি বসিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এ কেমন কথা? তাই প্রশ্ন উঠছে, কাদের ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি বসাতে পারেনি? শুধুই কি ছাত্রছাত্রী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ইউনিয়নের চাপ, নাকি নেপথ্যে অন্য কিছুও রয়েছে? সবচেয়ে বড় কথা ছাত্র মৃত্যুর পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তথা গোটা রাজ্য জুড়ে যখন শোরগোল পড়ে গিয়েছে, তখনও দেখা যাচ্ছে পাঁচিল টপকে বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকছে। ছাত্র মৃত্যুর পরেও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। তবে কি আগামী দিনে সবকিছু স্তিমিত হয়ে গেলে আগের অবস্থাই পুরোদমে ফিরে আসবে? তাই এটা স্পষ্ট এই মর্মান্তিক ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার জন্য শুধুমাত্র পড়ুয়াদের একাংশ দায়ী নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হস্টেল কর্তৃপক্ষ সমানভাবে দায়ী।
হস্টেলে পড়ুয়াদের ঘরে বাইরের লোক দিনের পর দিন অতিথি হিসেবে থেকে নানা কুকর্ম চালিয়ে গিয়েছে, আর তার কিছুই নাকি কর্তৃপক্ষ জানতে পারেননি? এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? তাহলে তো তাঁরা সেই পদে থাকারই যোগ্য নন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হস্টেলের কোণায় কোণায় সিসিটিভি বসালে অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে বলে নিশ্চিত সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু আদৌ সেটা সম্ভব হবে কিনা সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই রাজ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এবং পরিস্থিতির চাপে বিষয়টি বাস্তবায়িত হয় কিনা সেটাই দেখার।