কলকাতা: ধাপে ধাপে নয়, শুক্রবার পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল কংগ্রেস৷ একুশের ভোটে ঘাস ফুল শিবিরের প্রার্থী তালিকায় রয়েছে একের পর এক চমক৷ রয়েছেন অংখ্য তারকা প্রার্থী, আইনজীবী, চিকিৎসক৷ সকলের মাঝে অন্যতম চমক হলনে বলাগড় কেন্দ্রের প্রার্থী মনোরঞ্জন ব্যাপারী৷ তাঁর পরিচিতি দলিত সাহিত্যিক হিসাবে৷ তবে জীবনের অনেকগুলো দিন তিনি রিক্সা চালিয়েছেন৷ রান্নার কাজ করে জীবন অতিবাহিত করেছেন৷
আরও পড়ুন- সায়নী থেকে রাজ, জুন… প্রার্থী তালিকায় তৃণমূলী তারকারা
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে এখানে নিয়ে এসেছি৷ তিনি অনেক বই লিখেছেন৷ বর্তমানে তিনি দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট৷ উনিও এই সিদ্ধান্তে খুশি৷’’ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে সুপ্রভা মজুমদার স্মৃতি পুরস্কার৷ তাঁর জন্ম বাংলাদেশের বরিশাল জেলায়৷ মাত্র তিন বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে তিনি ভারতে চলে আসেন৷ ভারতে আসার পরেও তাঁর জীবন মোটেই সহজ ছিল না৷ বাঁকুড়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার ঘুটিয়ারী শরিফ সহ নানা জায়গায় উদবাস্তু শিবিরে ছিন্নমূল পরিবারের সঙ্গে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন৷ ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এই ভাবেই চলে। এর পর অসম, লখনউ, এলাহাবাদ প্রভৃতি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় স্বল্প পারিশ্রমিকে নানা ধরনের কাজ করেছেন। একসময় জীবিকার খোঁজে তিনি দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে চলে গিয়েছিলেন। অমানুষিক পরিশ্রম, বর্ণবিদ্বেষমূলক অপমানের মধ্যে দিয়ে তাঁর বেড়ে ওঠা৷
আরও পড়ুন- মোক্ষম জবাব! শোভন-কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী তাঁরই পত্নী রত্না
মধ্যভারতের নকশাল আন্দোলনও শ্রমিক নেতা শঙ্কর গুহনিয়োগীর সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। এর পর রাজনৈতিক কারণে জেল বন্দী থাকার সময় নিজের প্রচেষ্টায় পড়াশোনা শেখেন৷ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কখনও মালবাহক, কখনও আবার শ্রমিক, কুলি, দিন মজুর বা রিক্সা চালকের কাজ করে চরম দারিদ্র্যের মধ্যেই সাহিত্য সাধনা করেন৷ আজ দলিত সাহিত্যিক হিসাবে তিনি সর্বজনবিদিত৷ টানা ২৩ বছর তিনি রান্নার কাজ করেছেন৷ দু’বেলা নিজের হাতে দেড়শো জনের রান্না করেছেন৷ ১৯৯৭ সাল থেকে মুকুন্দপুরের হেলেন কেলার বধির বিদ্যালয়ে রান্নার কাজ করতেন৷ পরে সরকারি হস্তক্ষেপে রান্না ঘর থেকে মুক্তি পান তিনি৷ কাজ শুরু করেন গ্রন্থাগারে৷ একুশের ভোটে হুগলীর বলাগড় কেন্দ্রের প্রার্থী হলেন এই লড়াকু দলিত সাহিত্যিক৷