হৃদয়ে লেখ নাম.. ১০১ তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা মান্না দে

হৃদয়ে লেখ নাম.. ১০১ তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা মান্না দে

কলকাতা: ‘হৃদয়ে লেখ নাম.. সে নাম রয়ে যাবে’৷ তাঁর নাম রয়ে গিয়েছে আপামর বাঙালির মনে৷ সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে তিনি আজও এক জীবন্ত আবেগ৷ তিনি বেঁচে আছেন তাঁর সৃষ্টিতে৷ বেঁচে আছেন হাজার হাজার মানুষের মনে৷ আজ এই প্রবাদপ্রতীম শিল্পীর ১০১ তম জন্মবার্ষিকী৷ তিনি শুধু বাংলার নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র৷ 

১৯১৯ সালের পয়লা মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন মান্না দে৷ বাবা-মা তাঁর নাম দিয়েছিলেন প্রবোধ চন্দ্র দে৷ কিন্তু এই নামটা থেকে গিয়েছে কাগজে-কলমেই৷ সারা বিশ্ব দরবারে তিনি বন্দিত হলেন মান্না দে নামে৷ ছোট থেকেই সঙ্গীতের আবহে বেড়ে ওঠা তাঁর৷  মা মহামায়া এবং বাবা পূর্ণা চন্দ্র দে তো ছিলেনই, তবে সঙ্গীতের প্রতি এই অনুরাগ তৈরি হয়েছিল তাঁর কাকা সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র থেকে৷ তিনিই ছিলেন মান্না দে’র অনুপ্রেরণা৷ 

১৯৪২ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে কাকার হাত ধরে স্বপ্ন নগরী বোম্বেতে (বর্তমানে মুম্বাই) পাড়ি দেন মান্না দে। সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেই কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। প্রথমে নিজের কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দে, পরে শচীন দেব বর্মনের সহকারী হিসাবেই শুরু হয়েছিল তাঁর সঙ্গীত জীবনের যাত্রাপথ৷ ওই বছরই প্রথম কাকার সঙ্গীত পরিচালনায় ‘তামান্না’ ছবিতে একটি ডুয়েট গানের মধ্যে দিয়ে বলিউডে পা রাখেন তিনি৷ প্রথম গানই ছিল সুপারহিট৷ সোলো ব্রেক হিসাবে প্রথম সুযোগ আসে ‘রাম রাজ্য’ ছবিতে৷ শোনা যায়, প্রথমে এই ছবির জন্য গান গাওয়ার প্রস্তব এসেছিল কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র কাছেই৷ কিন্তু তিনি বারণ করে দেন এবং সুযোগ পান মান্না দে৷ এরপর আট দশকের দীর্ঘ কেরিয়ারের চার হাজারেরও বেশি  বেশি গান রেকর্ড করেছেন তিনি। 

১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাম রাজ্য’ ছবিতে 'গায়ি তু তো গায়ি সীতা সতী' গানটি রেকর্ড করেন মান্না দে। জানা যায়, স্বয়ং গান্ধীজি নাকি এই ছবিটি দেখেছিলেন।১৯৫০ সালে ‘মশাল’ ছবিতে শচীন দেব বর্মনের সঙ্গে প্রথম জুটি বাঁধেন মান্না দে৷ উপর গগন বিশাল এবং দুনিয়াকে লোগো-ছবিতে দুটো গান রেকর্ড করেছিলেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস৷ একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে গিয়েছেন এই জুটি৷ ১৯৫৩ সালে গোটা দেশের মন ছুঁয়ে যায় মান্না দে’র সুর৷ ‘দো বিঘা জমি’ ছবিতে সলিল চৌধুরীর কম্পোজিশনে তাঁর গান সুপারহিট হয়৷ এই বছরই তিনি সুলোচনা কুমারণের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন৷ তাঁদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে৷ সুরোমা (১৯৫৬) এবং সুমিতা (১৯৫৮)।মান্না দে গান করেছেন লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলের সঙ্গেও৷ লতা মঙ্গশকরের সঙ্গে তাঁর প্রথম ডুয়েট ছিল লপট কে পোট পাহানে বিক্রল। আশা ভোঁসলের সঙ্গে মান্না দে'র গাওয়া প্রথম গান ও রাত গয়ি ফির দিন আয়া। ১৯৫২ সালে আন্দোলন ছবিতে কিশোর কুমারের সঙ্গে প্রথম কাজ করেন মান্না দে৷ সেরা গায়কের স্বীকৃতি আসে ১৯৬৯ সালে৷ ‘মেরে হুজুর’ ছবির জন্য প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়ক নির্বাচিত হন তিনি৷
১৯৯২ সালের পর আর হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেননি মান্না দে৷ এরপর বাংলা ছবি এবং একক সঙ্গীতের কাজেই মন দেন৷ 

হিন্দি এবং বাংলার পাশাপাশি মৈথিলি, পঞ্জাবি, গুজরাতি, মারাঠি, কন্নড়, মালায়ালম ভাষাতেও গান রেকর্ড করেছেন মান্না দে। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’। তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি ডকুমেন্ট্রি। ভারতীয় সঙ্গীত জগতে অসামান্য অবদানের জন্য বহু সম্মান পেয়েছেন মান্না দে। ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণে সম্মানিত করেছে৷ পেয়েছেন দাদা সাহেব ফালকে সম্মান৷ ২০১৩ সালের সালের ২৪শে অক্টোবর জীবনের সফর হয় তাঁর৷ বিদায় নেন জীবনের জলসাঘর থেকে৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *