ঝুলিতে এমএ পাশের ডিগ্রি, জোটেনি চাকরি! পেট বাঁচাতে চায়ের দোকানই ভরসা হেমন্তর

ঝুলিতে এমএ পাশের ডিগ্রি, জোটেনি চাকরি! পেট বাঁচাতে চায়ের দোকানই ভরসা হেমন্তর

কলকাতা: ঝুলিতে রয়েছে বিস্তর ডিগ্রি৷ কিন্তু জোটেনি চাকরি৷ অগত্যা পেট বাঁচাতে চায়ের দোকান খুললেন এমএ পাশ যুবক৷ বছর ২৮-এর ওই যুবকের নাম হেমন্ত মল্লিক৷

আরও পড়ুন- ফিরেছে মাও আতঙ্ক, নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ জঙ্গলমহলের তৃণমূলের নেতারা

স্নাতকোত্তর বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন হেমন্ত৷ রয়েছে সরকারি আইটিআই কলেজের শংসাপত্রও৷ স্বপ্ন ছিল চাকরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন৷ কিন্তু, একের পর এক পরীক্ষায় বসেও চাকরি জোটেনি৷ বাধ্য হয়ে শুরু করেছিলেন গৃহশিক্ষকতা৷ তাতেও বাঁধ সাধল করোনা৷ অবশেষে পেট বাঁচাতে খোলেন চায়ের দোকান৷ হেমন্তের কথায়, ‘‘এ রাজ্যে পিএইচডি করা ছাত্রছাত্রীরাই চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন না, সেখানে আমার মতো এমএ পাসদের সম্ভাবনা আর কতটুকু? তাই চায়ের দোকান খুলেছি।’’ 

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে শোরগোল ফেলেছিল হাবড়া স্টেশনে ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’ নামে চায়ের দোকান৷ এম পাশ করে শিক্ষিকা হতে চেয়েছিলেন টুকটুকি দাস৷ রবীন্দ্রভারতী থেকে দূরশিক্ষায় ইংরেজিতে স্নাতকোত্তরে ৬১ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন৷ কিন্তু তার ভাগ্যেও চাকরি জোটেনি৷ তবে রীতিমতো আলোড়ন ফেলে তাঁর চায়ের দোকান৷ সেই পথেরই শরিক হেমন্ত৷ 

মন্তেশ্বর-পুটশুড়ি রাস্তায়, পাতুন পাঁচ মাথা মোড়ে হেমন্তের চায়ের দোকান৷ ছোট্ট গুমটিতে চা খেতে আসেন অনেকেই। ভোর ৫টায় দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু৷ ‘যুদ্ধ’ চলে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত৷ মাঝেমধ্যে তাঁর কাজে সাহায্য করতে আসেন দিনমজুর বাবা শীতল মল্লিক। পাতুন গ্রামে মাটির বাড়িতে রয়েছে দু’টি ঘর৷ সেখানেই থাকেন হেমন্তরা৷ বাড়িতে রয়েছেন বাবা-মা, স্ত্রী ও দেড় বছরের কন্যা সন্তান, ভাই আর ভ্রাতৃবধূ। 

হেমন্ত জানান, চন্দ্রপুর কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর ভর্তি হয়েছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ দূরশিক্ষায় স্নাতকোত্তর করেন। এরই মাঝে বড়শুলের সতীশচন্দ্র কলেজ থেকে ‘টার্নার’ হিসাবে আইটিআই পাশ করেন। কম্পিউটারের ‘বেসিক কোর্স’-ও করা আছে তাঁর৷ 

চাকরি না পেয়ে দীর্ঘদিন টিউশন পড়িয়েছেন হেমন্ত৷ তিন বছর আগে বিয়ে করেন৷ বিয়ের পর সংসারের খরচ বাড়ছিল৷ তার উপর করোনা পরিস্থিতিতে টিউশন পড়ানোও প্রায় বন্ধ হতে বসে৷ সেলামি দিয়ে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে যে ব্যবসা শুরু করবেন, সেই ক্ষমতাও ছিল না৷ তাই সংসার বাঁচাতে চায়ের দোকান খোলারই সিদ্ধান্ত নেন এমএ পাশ হেমন্ত৷

ছেলের এই অবস্থা দেখে তাঁর বাবার গলায় ঝরে পড়ল একরাশ আক্ষেপ৷ তিনি বলেন, ‘‘জমিজমা কিছুই নেই। দিনমজুরি করে বহু কষ্টে ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করেছিলাম। ভেবেছিলাম চাকরি করে কষ্ট দূর করবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে৷ এটা দেখে খুবই খারাপ লাগে। একটা চুক্তিভিত্তিক কাজ জুটলেও এত কষ্ট করতে হত না৷’’ তবে বিডিও (মন্তেশ্বর) গোবিন্দ দাস জানিয়েছেন, হেমন্ত যদি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয়ে কিংবা ব্যবসার জন্য ঋণের আবেদন করেন, তাহলে তাঁকে সাধ্য মতো চেষ্টা করা হবে৷ 

এদিকে হেমন্তর চায়ের দোকানের খবর জানাজানি হতেই বিজেপির কাটোয়া সংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘এ রাজ্যে যত দিন তৃণমূল সরকার থাকবে, তত দিন যুব সমাজকে বেকারত্বের যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে৷ কারণ, এটা নেই-রাজ্য।’