কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে। এই মন্তব্য করে নিজের দলের মধ্যেই বিতর্ক উস্কে দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে এমনটাই জানা গেছে। এই খবর সামনে আসার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রাজ্য বিজেপি কর্মীরা। এই নিয়ে তাঁরা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর কাছে নালিশ করেছেন।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এ কোনো আলটপকা মন্তব্য নয়। এর পেছনে অন্য ইকুয়েশন আছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিলীপ ভেবেচিন্তেই এই মন্তব্য করেছেন, বা তাঁকে দিয়ে কারানো হয়েছে। কারণ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, বিরোধীদের জোট প্রয়াসে মোদী-শাহদের ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় দিলীপের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে ধুঁয়ো উঠল, বিজেপি-তৃণমূল সেটিং স্পষ্ট। এই হাওয়া কোনোভাবে কংগ্রেসকে কি ভাবাবে? তাহলে জোট প্রক্রিয়া কি ধাক্কা খাবে? তৃণমূলের একটা অংশ বলছে, এতে বিজেপির উদ্দেশ্য সফল হবে না। দেখা যাক।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক মধুর নয়। সম্প্রতি রথ যাত্রা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তরজা চরম সীমায় উঠেছে। এই অবস্থায় হঠাৎ করে তৃণমূলনেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে গেলেন কেন দিলীপ? রাজনৈতিক মহলে এই নিয়ে জোর চর্চা চলছে। জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান বিজেপি সভাপতি। রাজনীতিতে এই সৌজন্য বিরল নয়। কিন্তু তিনি যে বিতর্ক উস্কে দিলেন, তা এককথায় রাজনৈতিক আলোচনার রসদ জুগিয়ে দিল খানিকটা। জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে দিলীপ বলেন, তাঁর সুস্বাস্থ্য কামনা করি, যাতে তিনি আরো ভালো কাজ করে যেতে পারেন। এখানেই থেমে না থেকে তিনি আরো বলেন, কোনো বাঙালির যদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা থাকে, তাহলে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমি তাঁর সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য চাইছি। কারণ তাঁর সাফল্যের ওপর নির্ভর করবে রাজ্যের ভাগ্য। এরপরে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলা থেকে কারো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
এর উত্তরে বিজেপি সভাপতি বলেন,মমতার সম্ভাবনা আগে। তারপরে অন্য কেউ হতেই পারেন। জ্যোতি বসুকে আমরা প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পাইনি তাঁর দলের জন্য। একইসঙ্গে তিনি উল্লখ করেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আমরা প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পেয়েছি। এখন সময় এসেছে বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাউকে দেখার। মমতা যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে তা উল্লেখ করতে ভোলেননি দিলীপ।
এর আগেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ধমক খেয়েছিলেন দিলীপ। এবার সেই সম্ভাবনা আরো প্রকট হল। কারণ দিলীপের বক্তব্যের পরেই দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের রক্ত বইছে, এই অবস্থায় দিলীপ কী করে এই মন্তব্য করেন? প্রশ্ন বিজেপি কর্মীদের একাংশের। এই নিয়ে বাম-কংগ্রেস প্রচার শুরু করেছে বলে মনে করেন কর্মীদের আরেকটা অংশ। ফেসবুকের দেওয়ালে পোস্টের হিড়িক- বিজেপি-তৃণমূল সেটিং। সেই বিতর্কের পালে হাওয়া দিলেন খোদ বিজেপি সভাপতিই। এতে কর্মীদের মনোবল ধাক্কা খেয়েছ, তা তাঁদের ক্ষোভ দেখেই বলা যায়। এটা নিছক আলটপকা মন্তব্য বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। এর কারণ অনুসন্ধানে চলছে তরজা।