কলকাতা: একুশের ভোটে টিকিট ‘না’ পাওয়াকে কেন্দ্র করে তোলপাড় তৃণমূলের অন্দরমহল৷ চলছে মান–অভিমান, ক্ষোভের পালা৷ কেউ বিদ্রোহ ঘোষণা করে দল ছেড়েছেন৷ কেউ আবার অভিমানে৷ এরই মধ্যে উঠে এসেছে আরও একটি নাম৷ প্রশ্ন উঠছে কেন টিকিট পেলেন না যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য৷ বিশেষ করে যখন বালি কেন্দ্রে তাঁর প্রার্থী হওয়ার জল্পনা ছিল তুঙ্গে৷ প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম না থাকায় সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে ট্রোল৷ এবার ফেসবুক লাইভ করে তাঁরই জবাব দিলেন দেবাংশু৷
আরও পড়ুন- অসুস্থতার কারণেই মৃত্যু হয়েছে মইদুলের! বলছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
এদিন শুরু থেকেই দেবাংশু ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে৷ বলেন, যাঁরা বলেছিলেন দেবাংশুকে খেলার বাইরে বার করে দেওয়া হল, তাঁদের সঙ্গেই একটু খেলব৷ সুর চড়িয়ে তৃণমূলের এই যুব নেতা বলেন, ‘‘আমি কোনও দিনও টিকিট চাইনি৷ আমার দল কখনও বলেনি দেবাংশুকে টিকিট দেওয়া হেব৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি সূর্বকান্ত মিশ্র, বিমান বসু বা দিলীপ ঘোষের কানে গিয়ে বলে এসেছিলেন দেবাংশুকে টিকিট দেওয়ার কথা৷ আসলে সকলে টিকিট বা পদ পাওয়ার জন্যই দলের হয়ে খাটেন৷ তাই আপনাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কেউ শুধু তাঁর আদর্শকে বুকে নিয়ে, শুধুমাত্র প্রচারের জন্য, শুধু কোনও ব্যক্তিকে ভালোবেসে কখনও দল করতে পারে না৷ ’’
বাম নেতা শতরূপ ঘোষও দেবাংশুকে নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন৷ যেখানে কিছু পুরনো ভিডিও আপলোড করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে দেবাংশু বলেন, ‘‘আমি ওঁনাকে কাউন্টার করি না৷ ওটা আমার লেবেল নয়৷ আমি বিজেপি’তে টার্গেট করি৷’’ কটাক্ষ করে দেবাংশু আরও বলেন, ‘‘যে কসবা থেকে দুই বার হেরে গিয়েছেন এবং আরও একবার হারতে চলেছেন, তিনি ২৫ বছরের ছেলেকে বলছে হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দেব!’’
আরও পড়ুন- একুশে কি ফের প্রত্যাবর্তন? সমীক্ষায় বিজেপি’কে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল তৃণমূল
তাঁর কথায়, টিকিট পেলে একটা কেন্দ্রে বন্দি হয়ে থাকতে হত৷ দল মনে করেছে আমাকে প্রচারের কাজে লাগাবে৷ যাঁরা আমাকে নিয়ে কথা বলেছেন, তাঁদের বাড়ির সামনে গিয়ে প্রচার করব৷’’ বয়স নিয়েও এদিন বিবৃতি দেন দেবাংশু৷ তিনি জানান, তাঁর জন্ম ১৯৯৬ সালের ১ এপ্রিল৷ আর বালি কেন্দ্রে ভোট হবে তৃতীয় দফায়৷ যে কেন্দ্রে স্কুটিনির শেষ তারিখ ২৪ মার্চ৷ ওই দিন তাঁর ২৫ বছর বয়স হতো না৷ তাই বালিতে টিকিট পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না৷
দেবাংশু বলেন, ‘‘আজ নরেন্দ্র মোদীর মতো এত বড় একজন নেতাকেও ২৫ বছরের একটি ছেলের স্লোগান ধার নিতে হচ্ছে৷ আমার সঙ্গে কোনও খেলা হয়নি৷ আমি খেলব বিজেপি-সিপিএমের সঙ্গে৷ ২৯৪টি কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে খেলব৷ এই খেলার পর নবান্নের ১৪ তলায় আবার আমার দিদিকে বসাব৷’’ বুক ঠুকে দেবাংশু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বুকে বাস করে৷ আদর্শটা ভিতর থেকে হয়৷ ছোটবেলা সবাই যখন শাহরুখ খানের ছবি সংগ্রহ করত, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংগ্রহ করতাম৷’’
যাঁরা বলছে দেবাংশু বিজেপি’তে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের যোগ্য জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি আদর্শটাকে খোলসের মতো বদলাতে পারি না৷ আমি শুভেন্দু অধিকারী নই৷ আমার শিড়ায়, হৃদপিণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আদর্শ পরিবর্তন করার চেয়ে মৃত্যু হওয়া ভালো৷ যত দিন বেঁচে থাকব বিজেপি আর সিপিএম করব না৷’’
আরও পড়ুন- অগ্নিকাণ্ড নিয়ে শুরু রাজনীতি, গাফিলতির অভিযোগ বিজেপির, নিশানা মমতাকে
সেই সঙ্গে তিনি এটাও বলেন, রাজনীতিতে লং টার্মের জন্য আসিনি। আমি রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে নই৷ দিদিকে বলেছি ২০২১পর্যন্ত রাজনীতিতে আছি৷ ২ মে ভোটের ফল ঘোষণা হবে। দিদি আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সবুজ আবির মেখে দিদিকে প্রণাম করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসব। ব্যক্তিগত জীবন, কেরিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করব।’ তবে কি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এই যুব নেতা?