কলকাতা: করোনার বিরুদ্ধে সারা দেশের লড়াইকে একধাক্কায় অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে দিল্লির নিজামুদ্দিনের ধর্মীয় সমাবেশে নিয়ম ভেঙে অনেক লোকের যোগদান। ভাইরাসের যে গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসন মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে, ওই ঘটনা তারই দিকে এক ধাক্কায় দেশকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন।এমত অবস্থায় ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া এরাজ্যের বাসিন্দাদের চিহ্নিত করে তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে জোর কদমে।
এব্যপারে রাজ্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার জানিয়েছেন , এরাজ্য থেকে ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া ৭১ জনের নাম পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তাদের মধ্যে থেকে ৪০ জন বিদেশি সহ ৫৪ জনকে মঙ্গলবারই কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।বাকিদের কে বুধবারের মধ্যেই চিহ্নিত করা যাবে বলে জানিয়েছেন মমতা। বিষয়টি নিয়ে ভয় না পাওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ওই সমাবেশে গেছিলেন তারা নিজেরাই এগিয়ে এসে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।আর দয়া করে এসব নিয়ে কেউ বিভাজনের রাজনীতি করবেন না।’
তবে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্থ করলেও ওই ঘটনা যে প্রশাসনকে উদ্বেগে রেখেছে এদিনের ঘটনা প্রবাহ থেকেই তা পরিষ্কার।রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এদিন পুনরায় রাজ্যগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করা হয়।সেই বৈঠকের অনেকটা জুড়ে ছিল নিজামুদ্দিনের সমাবেশ ফেরতদের নিয়ে ব্যাবস্থা গ্রহণ।কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিব রাজীব গৌবা এদিন সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।সেখানে রাজ্যকে বলা হয় ওই সমাবেশে যোগদানকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। ভিসার শর্ত উপেক্ষা করে যেসব বিদেশি নাগরিক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানগুগ ব্যবস্থা নিতেও কেন্দ্্রীয় সরকার রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ রাজ্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্যের তরফে বৈঠকে তুলে ধরা হয় বলে নবান্ন সূত্রে খবর।ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্য দফতরের প্রধানসচিব-সহ অন্যান্য কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিনসকাল সাড়ে দশটা থেকে এই বৈঠক শুরু হয়। মূলত, নিজামুদ্দিন ফেরত ব্যক্তিদের বিষয়ে রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে, তা জানতে চায় কেন্দ্র। পাশাপাশি, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে অনেকটাই বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, তাও ক্যাবিনেট সচিবকে বিস্তারিত জানান রাজীব সিনহা। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেই নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, এদিনের বৈঠকে ফের ক্যাবিনেট সচিবের কাছে মুখ্যসচিব জানান রাজ্যের পক্ষ থেকে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭ ও মৃতের সংখ্যা ৫। ক্রমশই বাড়ছে রাজ্যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সংখ্যা কী করে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপও করা হয়েছে রাজ্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সচিবকে সেই কথাই জানান রাজীব সিনহা।