ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে দিল্লির দখলের বার্তা মমতার

লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে বিজেপি বিরোধী অবস্থান আরও স্পষ্ট করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দেশের তাবড় বিরোধী দলের নেতারা উপস্থিতে শনিবার মহাজোটের বার্তাদেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দেন বাংলার অগ্নিকন্যা৷ দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা খর্ব করা, সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ থেকে একের পর এক জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব

a2909068d60c2f3d163c95c4f56688e2

ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে দিল্লির দখলের বার্তা মমতার

লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে বিজেপি বিরোধী অবস্থান আরও স্পষ্ট করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দেশের তাবড় বিরোধী দলের নেতারা উপস্থিতে শনিবার মহাজোটের বার্তাদেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দেন বাংলার অগ্নিকন্যা৷ দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা খর্ব করা, সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ থেকে একের পর এক জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু অংশ:

আজকের এই ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার মঞ্চে ২৩-২৪ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীদিনে মোদী সরকারের এক্সপায়ারি ডেট শেষ হয়ে যাবে। এবার নতুন সকাল আসবে, সবাই একসাথে কাজ করব. এটাই আমাদের শপথ।

বাংলার মাটি পবিত্র, বাংলার মাটি স্বাধীনতা আন্দোলনের, নবজাগরণের পথ দেখিয়েছে, দেশের বিপদে পথ দেখিয়েছে, সংস্কৃতি-সভ্যতার আন্দোলনের পদ দেখিয়েছে।

কিছু লোক আজ ভারতের সর্বনাশ করার চেষ্টা করছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলছেন, ৭০ বছরে পাকিস্তান যা করতে পারেনি ৫ বছরে এই সরকার তা করে দেখিয়েছে। একে অপরকে ভেঙে দিয়েছে, সব প্রতিষ্ঠান নষ্ট করে দিয়েছে, বিদ্বেষমূলক রাজনীতি শুরু করেছে।

সারা ভারতকে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। ব্যাঙ্ক ধুঁকছে, বাজার ঝুঁকছে, দাম বাড়ছে আর বিজেপি হাসছে। দাঙ্গায় ভারত সর্বশান্ত, আর বিজেপি দাঙ্গায় ব্যস্ত।

নোট বাতিল, জিএসটি চালু করে পুরো ভারত লুঠ করে নিল। আর বলছে সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। উনি একা সৎ, আর বাকি সবাই অসৎ। জনধন, এনপিএ, রাফাল, বীমা নিয়ে বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে। অনেক কেলেঙ্কারি হচ্ছে দেশে। চোরের মায়ের বড় গলা। সততা দেখাচ্ছে।

নির্বাচনের নামে টাকা লুঠ করছে। ওদের কত টাকা ছিল আর এই ৫ বছরে কত টাকা হয়েছে?

রাজনীতিতে একটা সৌজন্য আছে, আপনারা মানেন নি, রাজনীতিতে একটা লক্ষ্মণরেখা আছে আপনারা তাও মানেন নি। আপনি সোনিয়া জি, লালুজি, অখিলেশ, মায়াবতি জি, আমি কাউকেই ছাড়েননি, তাহলে আপনাকে কেন সবাই ছেড়ে দেবে? আপনার সাথে থাকলে ভাল, না থাকলেই তারা চোর! ভয় দেখাচ্ছে! বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ কৃষকদের শস্য বিমার টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার আর ছবি বিলোচ্ছে বিজেপি, আর বলছে সব ওরা করে দিচ্ছে। ওরাই যদি সব করে দেবে তাহলে রাজ্য সরকারের কি প্রয়োজন?

সংবিধান অনুযায়ী, কেন্দ্রের মত রাজ্য সরকারও সাধারণ মানুষের দ্বারা নির্বাচিত, এখন ওরা সংবিধানও মানছে না।

ইতিহাস-ভূগোল-সংবিধান-গণতন্ত্র সব বদলে দিচ্ছে। সব যখন বদলাচ্ছে বিজেপি সরকার কেন বদলাবে না?

কর্ণাটকের সরকারের বিধায়কদের টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছে বিজেপি। অথচ ওখানকার সরকার সাধারণ মানুষ দ্বারা নির্বাচিত, অথচ বিজেপি সাধারণ মানুষকে সাহায্য করে না।

বিজেপি বলেছিল বছরে ২ কোটি লোককে চাকরি দেবে, আর তার বদলে ২০১৮ সালে ২ কোটি লোক বেকার হয়ে গেছে। শুধু মানুষকে ভাওতা আর প্ররোচনা দিয়েছে।

এনআরসি-র নাম করে মানুষ নিধন করেছে, অত্যাচার করছে, যা ইচ্ছে তাই চলছে, এই জিনিস বেশি দিন চলতে পারে না। কখনও কখনও মানুষকে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

ইন্দিরা গান্ধী আর শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের বিজয় উৎসব পালন করেছিলেন এই ব্রিগেডে। জহরলাল নেহেরু, অটলজি-রা, বামেরা র‍্যালি করেছিলেন। আজ দেশের মানুষকে বিচার দেওয়ার জন্য আমরা এই র‍্যালি করছি। দেশের নতুন ইতিহাস তৈরির জন্য এই গঠবন্ধন। আজ দেশের প্রয়োজনে সবাইকে একসাথে হতে হবে। শহর নয় দেশ গুরুত্বপূর্ণ, এটা মাথায় রাখতে হবে। কালেকটিভ লিডারশীপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কেউ কেউ বলছে নেতা কে হবেন? কেন আমাদের কি নেতার অভাব? আপনার দল leader less হয়ে গেছে তাই আপনার দলে একজনই প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু গঠবন্ধনে আমরা সকলে নেতা, সকলে কর্মী, সকলে অরগানাইজার। আমরা প্রত্যেকে রাজা, প্রত্যেকেই প্রজা, কারণ এটা গণতন্ত্র। আমরা প্রধানমন্ত্রী পরে ঠিক করব। এখন এটা প্রশ্ন নয়।

আজ থেকে আমাদের মিটিং শুরু হল, চন্দ্রবাবু নাইডু ওনার রাজ্যে মিটিং ডাকলে যাব, কেজরিওয়াল মিটিং ডাকলে যাব, জম্মু-কাশ্মীরে ফারুক আবদুল্লা-জি মিটিং ডাকলেও যাব।

আজ আমরা এখানে মিটিং করছি বলে ওরা দিল্লিতে সব এজেন্সিকে ডেকে নিয়েছে। এর পর কি করবে ঠিক করার জন্য। যা মন চায় করুক। সিবিআই-কে শ্রদ্ধা করি; বিজেপি ওদের সম্মান নষ্ট করে দিয়েছে। সব অফিসার খারাপ নয়, সব জায়গায় কিছু ভালো মানুষও আছে, কিছু খারাপ মানুষও আছে।

সিবিআই, ইডি, আরবিআই কে বদনাম করেছে, ব্যাঙ্কগুলোকে শেষ করে দিয়েছে, এরপর আপনারা যদি বিজেপিকে ভোট দেন আপনাদের ব্যাঙ্কে যা টাকা রেখেছেন তা আর ফেরত পাবেন না। বিএসএফ, সিআরপিএফ এদের নিয়েও রাজনীতি করছে। মানুষ মারছে, লিনচিং করছে।

আমাদের এক কবি অসমে এক অনুষ্ঠানে গেছিলেন, ৪ ঘণ্টা ধরে তাকে অসম্মান করেছে বিজেপির লোকেরা। আমাদের বাংলায় এসব হয় না।

এখন বাংলায় এসে বলে দাঙ্গা লাগিয়ে দাও এই একটাই কাজ ওদের।

আমরা বাংলায় রথযাত্রার নামে দাঙ্গা লাগাতে দেব না। জনতার কাছে এই আমার প্রতিশ্রুতি। আমি প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করি। আমরা যেখানেই সভা করি, ওরা বলে আমরা তার পরে সেখানে সভা করব। আমি ওদের বলি, তোমরা ৩৬৫দিন সভা কর, এখন রাজ্যে ২টো আসন আছে, এর পরে সেদুটোও থাকবে না।

বিজেপি বাংলায় আসন না পেলে, বিহারেও পাবে না, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীজি ও অখিলেশ এক হওয়ার ফলে অখানেও পাবে না, জম্মু কাশ্মীরেও ওমর আবদুল্লা ফারুক আবদুল্লা ভালো ফল করবে, দিল্লীতে আপ জিতবে, গুজরাটে হার্দিক-জিগ্নেশকে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে অনুরোধ করব, উত্তর পূর্ব ভারতে ১আসন পাবে কিনা সন্দেহ, সারা দেশের মানুষ মানসিক ভাবে প্রস্তুত বিজেপিকে বিদায় করতে। বিজেপি কারোর কথা শোনে না, কারোকে ধত্যবের মধ্যে ধরে না, গণতন্ত্র মানে না। বিজেপির আচ্ছে দিন আর আসবে না। বিজেপি যে সুযোগ পেয়েছিল, তা হারিয়েছে।

অনেক হয়েছে আচ্ছে দিন, এবার বিজেপিকে বাদ দিন। অনেক হয়েছে আচ্ছে দিন, এবার কেন্দ্রকে বদলে দিন। অনেক হয়েছে আচ্ছে দিন, এবার বিজেপিকে পুরো ধারাশায়ী করে দিন। দেশকে এক ও ভালো রাখতে হলে, বিজেপিকে বাদ দিন। দেশের মানুষ, কৃষক, শ্রমিকদের, যুবদের ভালো রাখতে হলে, সব ধর্মকে একসঙ্গে রাখতে বিজেপিকে বাদ দিন। আগামীদিন বিজেপিকে একটাও ভোট দেবেন না। বিজেপি গেলে দেশের মঙ্গল।

কে প্রধানমন্ত্রী হবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমরা সকলে চাই বিজেপি যাক। বিজেপি চলে গেলে, তারপর আমরা ঠিক করব কে প্রধানমন্ত্রী হবে। যেই সরকার গড়ুক, ভালো সরকার গড়বে। পাঁচ বছরে এত কাজ করে থাকলে বাড়ি বাড়ি চিঠি পাঠানোর প্রয়োজন কি? প্রবাসী ভারতীয়দের বলছে, ১৫০০০ মানুষকে বলতে বিজেপিকে ভোট দিতে। কেন দেবে? বিজেপি টাকা দিয়ে সব রাজনৈতিক দল ভাঙতে চায়।

আমি বিজেপিকে জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনারা নিজেদের নেতাদের সম্মান দিয়েছেন? শত্রুঘ্ন সিনহাকে কি সম্মান দিয়েছেন? যে যশোবন্ত সিং অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে এত কাজ করেছে, তাঁকে কি সম্মান দিয়েছেন? অরুন শৌরীকে সম্মান দিয়েছেন? রাজনাথ সিং কে সম্মান দিয়েছেন? সুষমা স্বরাজকে সম্মান দিয়েছেন? নীতিন গড়করিকে সম্মান দিয়েছেন? নিজের দলকে সম্মান দিয়েছেন? ভোট সামনে তাই এখন আপনারা সম্মিলিত নেতৃত্বের কথা বলছেন, ভোটের পর যদি আপনারা জিতে যান, সকলকে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন, এটাই বিজেপির কাজ।

আমার জন্মভূমি ভাগাভাগি পছন্দ করে না, ঘৃণা পছন্দ করে না, রক্ত নিয়ে হোলি খেলা পছন্দ করে না, বিভেদ পছন্দ করে না। আমরা জন্ম চাই, মৃত্যু চাই না, সৃষ্টি চাই ধ্বংস চাই না, আমরা ঐক্য চাই।

ত্যাগের নাম হিন্দু, ইমানের নাম মুসলমান, প্রেমের নাম ইসাই, আর শিখরা বলিদানের প্রতীক। সারা দেশের মানুষকে নিয়ে যে চলতে পারে সেই দেশের নেতা, যে পারে না, সে নেতা নয়।

আগামীদিন, বিজেপি যেখানে মিটিং করবে তার পরের দিন সেখানে মিটিং করবেন। যেখানে কুৎসা রটাবে, পরের দিন ভাল করে রাজনৈতিক উত্তর দেবেন।

মানুষকে বিজেপি সর্বনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে। আজ দেশে ২ কোটি লোক বেকার আর আমরা বাংলায় বেকারত্বের হার ৪০% নামিয়ে এনেছি। ওরা বলেছে ২০২২ সালে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবে আর আমরা এর মধ্যেই তিন গুণ করে ফেলেছি।
আর আমরা শুধু একা নই। যে কটা দল বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করছে তারা উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। আজ ২৩টা দল ওদের বিরুদ্ধে। আরও ২-৪টে আছে যারা ওদের সমর্থন করবে না। আমরা অপেক্ষা করব। এক সাথে দেশের কাজ করব বলে আমি মনে করি।

আমরা বলি লড়তে পারলে লড়, গড়তে পারলে গড়, করতে পারলে কর, আর তা না হলে গদি ছাড়ো। তোমাদের সারা ভারতে কোনও জায়গা নেই।

যখন ভারতে নতুন সরকার গঠন হবে, বিজেপি বিদায় হবে, ততক্ষন আমরা আবার ব্রিগেডে মিটিং করব। আর আমি সমস্ত নেতাদের এখন থেকেই আহ্বান জানাচ্ছি, নির্বাচনে জেতার পরে এখানে আবার আসবেন। ভারতে একটা পরিবর্তন আসবে, সেটা কেউ থামাতে পারবে না।

আজকে ওরা সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখাচ্ছে। কত লোকের চাকরী খেয়েছে। মনে রাখবেন পরের লড়াইটা দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ কারণ আমরা প্রচুর নেতা দেখেছি, কিন্তু ভারতবর্ষে এরকম হিটলার দেখেনি। এরকম ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ শাসন করতে কাউকে দেখেনি। মানুষের কোনও স্বাধীনতা নেই।

সূত্র: এআইটিসি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *