মমতার পথ ধরে এবার অভিষেকও ধর্না রাজনীতিতে? এভাবেই কী অভিষেক জননেতা হতে চাইছেন?

মমতার পথ ধরে এবার অভিষেকও ধর্না রাজনীতিতে? এভাবেই কী অভিষেক জননেতা হতে চাইছেন?

mamata

নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে রাজনীতিকদের রাস্তাই যেন রাস্তা দেখায়। অর্থাৎ রাস্তায় বা মাঠে ময়দানে নেমে আন্দোলন না করলে সাধারণ মানুষের মন পাওয়া যায় না। তাই জননেতা হতে গেলে রাস্তায় নামতে হয়। আর সেই রাস্তাতে হেঁটেই, অর্থাৎ ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে বহু রাজনীতিক আজ জননেতা হয়েছেন। আন্দোলনের ফসল হিসেবে বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছেন তাঁরা। সেই তালিকা অনেক লম্বা। তবে আমাদের হাতের কাছেই বড় উদাহরণ হয়েছে। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি রাস্তায় নেমে বারবার আন্দোলন করে সাধারণ মানুষের মন ছুঁতে পেরেছেন। কতবার যে তিনি ধর্নায় বসেছেন তা গুণে শেষ করা যাবে না।

এবার মমতার দেখানো পথেই হাঁটতে চাইছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা দলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য রাজঘাটে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে ধর্নায় বসেছিলেন তিনি। এরপর কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে না পেরে কলকাতায় এসে কেন্দ্রের প্রতিনিধি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের হাতে দাবি দাওয়া তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন অভিষেক। কিন্তু রাজ্যপাল বর্তমানে দিল্লিতে। এরপরই অভিষেকের ঘোষণা, যতক্ষণ না রাজ্যপাল রাজভবনে ফিরছেন তিনি সেখানে ধর্না দেবেন। আর সেই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অভিষেকের তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। মমতার বহু ধর্না কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল সিঙ্গুরে কৃষিজমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ধর্মতলায় দীর্ঘদিনের অনশন কর্মসূচিতে বসা। দেড় দশক আগে সেই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি প্রবল ভাবে আন্দোলিত হয়েছিল। তবে মমতার প্রতিটি আন্দোলন ছিল তৎকালীন শাসক বামেদের বিরুদ্ধে। আর অভিষেক এখন ধর্না দিচ্ছেন বা আন্দোলন সংগঠিত করছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রশ্ন, এই রাস্তাতে হেঁটে অভিষেক কী মমতার মতো জননেতা হতে পারবেন? এর উত্তর হয়ত এখনই দেওয়ার সময় আসেনি। তবে অভিষেকের পক্ষে কাজটা অত্যন্ত কঠিন।

কিন্তু কেন? ঘটনা হল অভিষেকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেখানে মমতার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই। মমতার স্বচ্ছ ইমেজকে হাতিয়ার করে সেই সময় তৃণমূলের লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থক সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু অভিষেকের রাজনৈতিক জীবন কার্যত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে দুর্নীতির অভিযোগ গায়ে সেঁটে গিয়েছে, তা তৃণমূলের পক্ষে নিঃসন্দেহে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা মানেই তিনি রাতারাতি দোষী হয়ে গেলেন, আইন তা বলছে না। সেই অর্থে অভিষেকের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে অভিষেকের বিরুদ্ধে নিয়মিত যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে বিরোধীরা, তা যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিষেক তথা তৃণমূলের কাছে। অনেকেরই প্রশ্ন, মমতার যেখানে এত স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে, সেখানে নবীন অভিষেকের বিরুদ্ধে এখনই এত অভিযোগ উঠবে কেন? কেন বারবার তাঁকে রক্ষাকবচ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে, এই প্রশ্নও উঠছে। তাই বিভিন্ন ইস্যুকে হাতিয়ার করে অভিষেক যেভাবে আন্দোলন করছেন, তাতে তিনি মমতার মতো জননেতা হতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *